শামুকের বিষে তৈরী জাদুকরী পেইনকিলার !!!
গত চার বছর ধরে পিঠের ব্যথায় কাবু টর্স্টেন নিকেলস। স্পাইনাল ডিস্কে ছয়বার অস্ত্রপচার কারিয়ে; এমনকি মরফিন ব্যবহার করেও কমেনি তার ব্যথা। টর্স্টেন’র ভাষায়, ‘বারবার অস্ত্রপচার করানো হয়েছে, ব্যথা যা ছিল তাই রয়ে গেছে। আমি জানি যে ব্যথা ছাড়া বেঁচে থাকা আর কখনোই সম্ভব হবে না আমার পক্ষে।’
অবশেষে টর্স্টেন খুঁজে পান এমন এক চিকিৎসক, যিনি তাকে দেন আশ্চর্য কার্যকরী এক ওষুধ। সেই ওষুধেই ব্যথা কমে তার। মজার বিষয় হচ্ছে, ওষুধটি তৈরি করা হয় এক ধরনের সামুদ্রিক শামুক থেকে। পেটের অ্যাবডোমিনাল ওয়ালের তলায় রাখা একটি পাম্প দিয়ে ওষুধটা ছোট ছোট ডোজে স্পাইনাল ম্যারো বা মেরুদণ্ডের মজ্জায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ঠিকমতো ডোজটা দিতে পারাই হলো চিকিৎসকদের আসল চ্যালেঞ্জ। মরফিনের মতো এ ওষুধে আসক্ত হয়ে পড়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ডক্টর বার্বারা ক্লাইনমান জানান, ‘এই ওষুধটা তৈরি করতে পারাই একটা চমকে যাওয়ার মতো ব্যাপার। ওষুধটা মরফিনের চেয়েও হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী। আমার মতো বহু ব্যথার চিকিৎসক এ ধরনের একটা ওষুধের খোঁজে ছিলেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের উটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বালদোমেরা অলিভেরা’র সংগ্রহে এই হিংস্র সামুদ্রিক শামুকটির কিছু বিরল ভিডিও ছবি আছে। বিষযুক্ত বাণ ছুড়ে এই প্রাণিটি মুহূর্তের মধ্যে শিকারের প্রাণ নিতে পারে। সারা বিশ্বের গবেষকরা চেষ্টা করছেন, সামুদ্রিক ওই শামুকটির বিষের রহস্য ভেদ করার।
নিউরোফিজিওলজিস্ট গবেষক অধ্যাপক হাইনরিশ টের্লাউ জানান, ‘শামুকরা শ্লথগতিসম্পন্ন হওয়ায় শিকারের পেছনে ধাওয়া করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। শুধু যেসব শামুকের বিশেষভাবে কার্যকরী বিষ আছে তারাই বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় বেঁচে থাকতে পেরেছে। এভাবেই এই ‘কোন স্নেল’ বা ‘কোন স্নেইল’, অর্থাৎ শঙ্খাকৃতির শামুক তার বিষ সৃষ্টি করতে পেরেছে, যা যেমন শক্তিশালী তেমনই দ্রুত কাজ করে।’
পৃথিবীতে এ ধরনের প্রায় ৫০০ শামুক আছে। এদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব ধরনের বিষ আছে। সে বিষও আবার নানা পদার্থের সংমিশ্রণে গঠিত। বিজ্ঞানীরা এক একটি করে সেসব পদার্থের প্রকৃতি ও পরিচয় বোঝার চেষ্টা করছেন। সাফল্যও পাচ্ছেন। যেমন একটি পদার্থ বহুমূত্র রোগীদের রক্তে শর্করা কমাতে সক্ষম; কেননা তা থেকে শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন বাড়ে।
টর্স্টেন নিকেলসের ক্ষেত্রে সাগরের শামুকের কাছ থেকে পাওয়া ওষুধ ইতিমধ্যেই কাজে দিয়েছে। টর্স্টেন বলেন, ‘এই ওষুধটা পাওয়ার পর আমি খুব ভালো আছি। আমি আবার সাধারণ মানুষের মতো বাঁচতে পারছি, কাজ করতে যেতে পারছি। আমার ব্যথা ৮০ ভাগ কমে গেছে।’