উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করে কোমল পানীয় !!!
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে জানানো হয় শরবত, ঠান্ডা চা, চকলেট ড্রিংকস ইত্যাদি তৈরি করতে প্রচুর বাড়তি উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা উপকারের চেয়ে অপকারই করে বেশি।
ফলের শরবত: পানীয় হিসেবে উপকারী। তবে এটাও মনে রাখা উচিত, ফলে প্রচুর আঁশ থাকে যা শরবতে থাকে না। উপরন্তু যে চিনির ভয়ে কৃত্রিম পানীয় এড়িয়ে চলতে বলা হয়, ফলের রসের স্বাদ বৃদ্ধিতে সেই চিনিই ব্যবহার করা হয়। এক বোতল কার্বোনেইটেড পানীয়তে চিনির পরিমাণ ৪৪ গ্রাম। বোতলজাত এক কাপ আপেলের শরবতে প্রায় ৩১ গ্রাম চিনি থাকে আর আঙ্গুরের রসে চিনি থাকে প্রায় ৩৬ গ্রাম! পার্থক্য খুব বেশি নয়।
আমেরিকান পুষ্টিবিদ ইলিয়াস শাপিরো বলেন, আমি কখনও ‘জুস’ খাওয়ার পরামর্শ দেই না, যদি একশো ভাগ খাঁটি ফলের জুসও হয়, তাও না। ‘জুস’ পান করার চেয়ে সরাসরি ফল খেলে পেট আরও বেশি ভর্তি মনে হবে, কেননা ফলে আঁশ থাকে। আর পুষ্টিগুণও বেশি।
আইসড টি: অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর পানীয় হিসেবে চা চমৎকার। তবে মিষ্টি ‘আইসড টি’তে প্রচুর চিনি থাকায় এর থেকে বিশেষ উপকার পাওয়া যায় না। জনপ্রিয় যে কোনো ব্র্যান্ডের ‘আইসড টি’তে ৩০ গ্রামের বেশি চিনি থাকতে পারে। তাই চিনি ছাড়া ‘আইসড টি’ খাওয়া সবচেয়ে ভালো।
তবে চিনি ছাড়া ‘আইসড টি’ খেতে খুব বিস্বাদ লাগলে এক চামচ চিনি মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে বলে জানান শাপিরো। অথবা স্বাদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যগুণ ধরে রাখতে মধু মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে চিনি মেশালেও বাজারের আইসড টি থেকে ওই চিনির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম থাকবে। স্বাদ বাড়ানোর জন্য এক টুকরা লেবু বা কমলাও চিপে দেওয়া যেতে পারে।
এনার্জি ড্রিঙ্কস: এই পানীয় সবসময়ই ক্ষতিকর। এমন কি ‘ভিটামিন বি-যুক্ত’ এমন কথা লেখা থাকলেও। ৮ আউন্স এনার্জি ড্রিঙ্কসে ২৫ গ্রাম চিনি থাকে। কেবল চিনির জন্যেই না, সবদিক থেকেই এনার্জি ড্রিঙ্কস এড়িয়ে চলা উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, এনার্জি ড্রিঙ্কস সুস্থ মানুষেরও রক্তচাপ বৃদ্ধি করে ও নোরেপিনেফ্রিন, একটি চাপ সৃষ্টিকারী হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যদি শরীরে ক্যাফেইনের প্রয়োজন হয় তাহলে এক কাপ কফিই যথেষ্ট, কিন্তু এনার্জি ড্রিঙ্কস কখনও নয়।
দই থেকে তৈরি পানীয়: দই হচ্ছে প্রোবায়োটিকের সবচেয়ে ভালো উৎস, যা পাকস্থলী সুস্থ রাখে। তবে দই থেকে তৈরি পানীয় যেমন লাচ্ছিতে প্রচুর চিনি থাকে। বিভিন্ন খাবারের দোকানের লাচ্ছির পাশাপাশি প্যাকেটজাত লাচ্ছিও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, এগুলো পান করলে দইয়ের চেয়ে চিনিই গ্রহণ করা হবে বেশি।
বাহারি কফি: লাটে, ক্যাপুচিনো, মোকা, ফ্র্যাপে, এসপ্রেসো- এইসব বাহারি কফি যতই মনোলোভা হোক না কেনো, এগুলোতে প্রচুর চিনি, ক্রিম, চকলেট আরও কিছু উপকরণ ব্যবহার করা হয় স্বাদ বাড়ানোর জন্য। ফলে এগুলো আর স্বাস্থ্যের জন্য ততটা উপকার বয়ে আনে না। বরং দুধ ও পরিমিত চিনি মিশিয়ে নিজের কফি ঘরেই বানিয়ে নিন।
লেবুর শরবত: এই গরমে কোমল পানীয়ের বদলে বেছে নিতে পারেন লেবুর শরবত। তবে খেয়াল রাখতে হবে, লেবুর শরবতের নাম করে চিনি গোলানো পানিই বেশি খাওয়া হচ্ছে কিনা। লেবুর শরবত তৈরির সময় চিনি যথাসম্ভব কম ব্যবহার করুন। এছাড়া বাজারের শরবত বানানোর জন্য যেসব ইন্সট্যান্ট পাউডার পাওয়া যায় সেগুলো এড়িয়ে তাজা লেবু বেছে নিন।
স্মুদি: সাধারণত অনেক কাঁচাফল ও সবজি একত্রে মিশিয়ে স্মুদি তৈরি করা হয়। আপাতদৃষ্টিতে স্মুদিকে স্বাস্থ্যকর ভাবা হলেও তা ততটা স্বাস্থ্যকর নয় একই কারণে, আর তা হল চিনি। এতগুলো ফল একসঙ্গে খাওয়া হলে তা রক্তে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এক বোতল স্মুদিতে ৫৩ গ্রাম চিনি থাকতে পারে, যা আসে প্রাকৃতিক ফল থেকেই।
Related Posts
Comments
comments