বংশগত ডায়াবেটিস নিরাময়যোগ্য, দাবি গবেষকদের
ডায়াবেটিস নিয়ে আক্রান্ত মানুষের দুশ্চিন্তা লাঘবে চেষ্টা হচ্ছিল অনেকদিন ধরে। ভয়ঙ্কর এ রোগ প্রতিরোধ নিয়ে গলদগর্ঘ ছিলেন গবেষকরাও। বিশ্বের নানা দেশে এ নিয়ে গবেষণা হয়েছে ব্যপক। কম-বেশি সাফল্যও এসেছে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে।
খাওয়া-দাওয়া, বেসামাল জীবনাচারণকে ডায়াবেটিস রোগের অন্যতম কারন বলে চিহিৃত করেছেন গবেষক ও চিকিৎসকরা। বংশগত কারনে এ রোগ বিস্তারে বড় ভুমিকা রাখছে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
গবেষকরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নানা ওষুধ উদ্বাবন করেছেন, যা এ রোগ নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর ভুমিকা রাখছে। বংশগত ডায়াবেটিস (টাইপ ওয়ান) এবার পুরোপুরি নিরাময়ের তথ্য দিয়েছেন গবেষকরা।
বিশ্বখ্যাত ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ এমিলি বার্নস যুগান্তকারি এ ঘোষণা দিয়েছেন।
গবেষণায় দেখা যায়, ডায়ারেটিস আক্রান্তের রক্তে চিনির মাত্রাকে (সুগার লেভেল) স্বাভাবিক রাখতে জোর কসরৎ করে যে, সেই হরমোনের হচ্ছে ইনসুলিন। আক্রান্তের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা রক্তের বিটা কোষগুলোকে নষ্ট করে দিলেই ইনসুলিন হরমোনের সৃষ্টি হয়। রক্তের বিটা কোষ যত বেশি করে নষ্ট হয়, তত বেশি পরিমাণে শরীরে ইনসুলিন তৈরি হতে পারে।
বংশগত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য আক্রান্তের শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েকটি ‘হাতিয়ার’কে খুঁজে নেয়ার চেষ্টা চালায়, খুঁজে নেয়। সেগুলো কী কী, দশকের পর দশক ধরে সেটাই জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন গবেষকরা। প্রথম চারটি ‘হাতিয়ার’কে আগেই খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। ইনসুলিন, গ্লুটামেট ডিকার্বক্সিলেজ, আইএ-টু, জিঙ্ক ট্রান্সপোর্টার-এইট। এখন খোঁজ মিলল শেষ ‘হাতিয়ার’টির। যার নাম- টেট্রাস্প্যানিন-সেভেন। একটি রাসায়নিক। তার কোন অস্ত্রটাকে কখন কোথায় ব্যবহার করবেন, তা যেমন ঠিক করেন সেনাপ্রধান, ঠিক তেমনই আমাদের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাও টাইপ-ওয়ান ডায়াবেটিস (বংশগত) ঠেকাতে এই ‘হাতিয়ার’ গুলোকে ব্যবহার করে। একেক সময়, একেক ভাবে। টেট্রাস্প্যানিন-সেভেন রাসায়নিকটি আমাদের শরীরে আপনা আপনিই তৈরি হয়। আর ওই রাসায়নিকটি আমাদের শরীরে ইনসুলিন হরমোন তৈরি করতে আর তার সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা নেয়।
বিশিষ্ট ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ মিশেল ক্রিস্টির নেতৃত্বে ব্রিটেনের লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষকদল এই রাসায়নিকটির সন্ধান পেয়েছেন গত দু’-আড়াই দশকের নিরলস গবেষণার পর। তাদের গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে ‘ডায়াবেটিস’ জার্নালে।
গবেষকদের বক্তব্য, আমাদের সাধারণত দু’ধরনের ডায়াবেটিস হয়। টাইপ-ওয়ান আর টাইপ-টু। টাইপ-ওয়ান ডায়াবেটিস আসলে একটি বংশগত রোগ। আমাদের অগ্ন্যাশয় বা প্যাংক্রিয়াস ওই রোগে কিছুতেই ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। ফলে, ওই ধরনের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন রোগীরা। যে কোনও বয়সেই এই ডায়াবেটিস হতে পারে। তবে হলে, তা ৪০ বছর বয়সে পৌঁছনোর আগেই হয়। বংশগত বলে শৈশব থেকেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি। তবে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই যে ডায়াবেটিস হয়, সেটা টাইপ-টু। যা হয় মূলত আমাদের খাদ্যাভ্যাসের কারণে।