পিত্তথলিতে পাথর, ঠেকাতে কি করতে হবে?
খাবার হজমে, বিশেষ করে চর্বিজাতীয় খাবার হজম করতে পিত্তথলি প্রয়োজনীয় রসের যোগান দেয়। এটি থাকে পেটের ডানে যকৃতের পেছনে নিচের দিকে। নানা কারণে এই পিত্তথলিতে বিভিন্ন পদার্থ অতিরিক্ত জমে গিয়ে পাথরের সৃষ্টি করে। পিত্তথলিতে ছোট বালুর দানা থেকে শুরু করে মটরের দানা বা তার চেয়েও বড় শক্ত পাথর হতে পারে। পাথরের রং ও আকৃতি নির্ভর করে যে পদার্থ দিয়ে তৈরি হয় তার ওপর। কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন বা ক্যালসিয়াম ইত্যাদি পদার্থের সংমিশ্রণে তৈরি এই পাথরগুলো পিত্তরসের সঙ্গে মেশানো থাকে। পিত্তথলির পাথর হালকা বাদামী, ময়লাটে সাদা বা কুচকুচে কালো রঙের হতে পারে।
স্থূল আকৃতির ব্যক্তিদের পিত্তথলিতে পাথর বেশি হতে দেখা যায়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের এই প্রবণতা বেশি। এছাড়া চল্লিশোর্ধ্ব বয়স, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাবার অভ্যাস, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
পিত্তথলিতে পাথরের ব্যথাকে কোলেসিস্টাইটিস বলা হয়। এসময় পেটের ডানদিকে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা এক মিনিট থেকে এক ঘণ্টাও স্থায়ী হতে পারে। ব্যথাটি পেটের পেছন দিকে, কাঁধে, পেটের মাঝ বরাবর এমনকি বুকের ভেতরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্যথার সঙ্গে বমি ভাব বা বমি, হালকা জ্বর ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় পাথর পিত্তথলি থেকে বোরোতে গিয়ে পিত্তনালিতে আটকে যায়। এসময় বিলিরুবিনের বিপাক ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। পিত্তথলিতে পাথরের কারণে জন্ডিসও হতে পারে।
পিত্তথলি থেকে পাথর সরাতে পেট কেটে বা ফুটো করে—দুভাবেই এই অস্ত্রোপচার করা যায়। তবে পিত্তনালিতে পাথর আটকে গিয়ে থাকলে ইআরসিপি যন্ত্রের সাহায্যে সেটি বের করে আনা হয়।
পিত্তথলিতে পাথর প্রতিরোধে নিতে পারেন কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। যেমন-
– শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে।
– অধিক আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন-শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি।
– অধিক পরিমাণ উদ্ভিজ্জ তেল বা ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ তেল গ্রহণ যেমন-সূর্যমুখী তেল, অলিভ অয়েল, অধিক প্রাণিজ চর্বি গ্রহণ এড়িয়ে চলতে হবে।
– দিনে কমপক্ষে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
– নিয়মিত অল্প সামান্য দৈহিক ব্যায়াম করতে হবে।