মনের যে বিষয়গুলো সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাব রাখে
অনেক সময় আমরা বুঝতেও পারিনা যে কখন অবচেতন ভাবেই নিজের মনের ভাবনা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, মনের অজান্তেই কিভাবে আমাদের সিদ্ধান্তগুলো আমরা পরিবর্তন করি।কিছু বিষয় আছে যেগুলো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে।ম্যারি অ্যান সেইগার্ট একজন সাংবাদিক। তিনি এই বিষয়টি দেখার চেষ্টা করেছেন। এটিকে বলা হচ্ছে ‘নাজ থিওরি’- পরোক্ষ প্রভাব কিভাবে কাজ করে।বিষয়টি হলো বেশিরভাগ সময় আমরা খেয়ালই করিনা যে এটি ঘটে যাচ্ছে।প্রাত্যহিক জীবনে নাজ থিওরির কয়েকটি ক্ষেত্রে হয়তো আমরা কার্যকারিতা দেখতে পারি।
১. যখন আপনি লাঞ্চের অর্ডার করেন
লেখক ও বিজ্ঞাপন গুরু রিচার্ড সট্টন বলেন যখন আপনি বিভিন্ন বিশেষণ দিয়ে খাবারের বর্ণনা দেন তখন এটি খাবারকে আরও সুস্বাদু করে তোলে।অধ্যাপক ব্রায়ান ওয়ানসিঙ্ক এর এক গবেষণায় দেখা গেছে কিছু দু ধরনের স্যুপ কেমন তা দেখতে বলা হয়েছিলো একদল শিক্ষার্থীকে।এরমধ্যে আট শতাংশ শিক্ষার্থী স্যুপটি বেশ সুস্বাদু বলেছে যখন তাদেরকে এই খাবারের চমৎকার বর্ণনাসহ বলা হয়।
২. যখন আপনি লাইনে দাঁড়িয়েছেন
যখন আপনি কোনো সুপারমার্কেটের টাকা দেয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তখনো আপনি আরও কিছু কেনার চিন্তা করতে পারেন।শেষ সময়ে চুইংগাম, কিংবা ললির মতো জিনিসগুলো অনেকে তার ঝুড়িতে ভরে থাকেন।সেইগার্টের পরামর্শ, “মিষ্টি থেকে দুরে থাকুন”।কিন্তু কি হবে যদি সহজে পাওয়া যায় এমন মিষ্টিগুলোর পরিবর্তে ভিটামিন, বাদাম বা ফল থাকতো?
৩. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
নাজ মেথড একটি বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে যে মানুষ একটি নির্দিষ্ট উপায়েই আচরণগুলো করে।আমরা হয়তো নিজেকে অনেক সময় উদাহরণ সৃষ্টিকারী ভাবি কিন্তু আসলে বাস্তবতা হলো আমাদের সহজাত প্রবণতা হলো অন্যকে অনুসরণ করা।অনেকেই আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোটে অংশ নেই- এটা সোজা কারণ একটি মাত্র ক্লিক করলেই হয়ে গেলো।একই সময়ে আমাদের অন্য বন্ধুরা যখন দেখে আমি ভোট দিয়েছি তখন সেও ভোট দিতে উৎসাহিত হয়।
৪. নিজের পেনশনের জন্য যেভাবে অর্থ জমান
বিশ্বের বহু দেশেই মানুষ পেনশন তহবিলে টাকা জমা দিয়ে থাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।অবসর গ্রহণের পড় মানুষ পেনশনের টাকা পায়। এই টাকা প্রতি মাসে নিজের বেতন থেকে নিজের পেনশন ফান্ডে যায়।এই যে পেনশনের জন্য টাকা জমা রাখা – এই কাজটা অনেকে করেন না। ফলে অবসরের পড় অর্থাভাবে ভোগেন।তাইলে যদি এমন করা যায় যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবাইকে একটা পেনশন ফান্ডে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়।তাহলে মাসে মাসে বেতন থেকে ওখানে যাবে।
কেউ যদি চায় জমা রাখবে না তখন সে ওই পেনশন ফান্ডে যোগাযোগ করে তা বন্ধ করবে।যেটা সাধারণত মানুষ কম করে।
৫. যখন আপনি ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করেন
যখন স্টেশনের প্লাটফর্মে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করেন আর এমন সময় ট্রেন আসলো তখন হয়তো আপনাকে মুখে বলা হয়না যে একটু নিরাপদে দাঁড়ান।কিন্তু সেখানে যদি একটা লাইন একে দেয়া হয় তাহলে এমনিতেই আপনার ট্রেনের কাছে গিয়ে দাঁড়ানোর আশঙ্কা কমে যাবে।এ ধরনের হলুদ লাইন ট্রেন, স্টেশনগুলোর ভেতরে প্লাটফর্মে দেখা যায়।
৬. যখন আপনি নিজের পোস্ট পড়েন
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন নীতিনির্ধারণী বিষয়ে নাজ থিওরি ভালো ভাবেই গ্রহণ করেছিলেন।এমনকি তার একটি ‘নাজ ইউনিট’ও ছিলা যাদের অফিশিয়ালি বলা হলো ‘বিহেভিয়েরাল ইনসাইট টিম’।এই ইউনিটটি চালাতেন ডেভিড হ্যালপার্ন। তার মতে এটি সময়মত কর দিতেও লোকজনকে উৎসাহিত করে।তার মতে একটি চিঠিতে একটি মাত্র লাইন যোগ করেও তারা ভালো ফল পেয়েছেন।তারা শুধু লিখেছেন, “বেশিরভাগ মানুষ সময়মত কর দেয়, অল্প কয়েকজনের মধ্যে আপনিও বাকী আছেন”।এটি লেখার পর ১৫ শতাংশ বেড়েছিলো কর দেয়া।
৭. যখন আপনি বিমানের টিকেট কিনবেন
আপনি এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে কখনো খেয়াল করেছেন যে লেখা আছে ” আর মাত্র দুটি সীট অবশিষ্ট আছে এই মূল্যে”?
এর মাধ্যমে তারা আসলে আপনার ওপর একটা চাপ প্রয়োগ করছে যে -তাড়াতাড়ি কিনুন।
৮. যখন অনলাইনে কেনাকাটা করেন
অনলাইনে বিক্রেতারা তাদের পণ্যের বিক্রি নিশ্চিত করতে নানা উপায় অবলম্বন করেন।কেউ হয়তো বড় ফন্ট ব্যবহার করে মূল্য উল্লেখ করেন যেটায় বোঝায় সেটা অন্য সস্তাগুলোর মতো না।অনেক সময় তারা পণ্যের গায়ে ‘জনপ্রিয়’ শব্দটি উল্লেখ করে কারণ তারা জানে অন্যরা ব্যবহার করে খুশী হয়েছে এটি জানতে আমরা পছন্দ করি।