প্রয়োজনে দূর্বা ঘাস!
দূর্বা ঘাস সম্পর্কে সাধারণত আমরা জানি যে শরীরের কোথাও কেটে গেলে রক্ত বন্ধ করতে দূর্বা ঘাসের শিকড় ব্যবহার করা হয় আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা অর্চনায় দূর্বা প্রয়োজন হয়৷ চলুন দেখেনিই দূর্বা ঘাসের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুণ।
দূর্বা ঘাসের বৈজ্ঞানিক বা উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Cynodon dactylon. দূর্বা ঘাস বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন ধুব, বারমুডা গ্র্যাস, দুবো, ডগ’স টুথ গ্র্যাস, বাহামা গ্র্যাস, ডেভিল’স গ্র্যাস, কোচ গ্র্যাস, ইন্ডিয়ান দোয়াব, আরুগাম্পুল, গ্রামা, উইয়্যারগ্র্যাস এবং স্কুট্স গ্র্যাস৷
দূর্বা ঘাসের ঔষধি ব্যাবহার:
দূর্বা ঘাসের পুষ্টি উপাদান: দূর্বা ঘাসে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশ, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, প্রোটিন, এনজাইম, শর্করা, আঁশ, ফ্লাভোনয়েডস এবং উপক্ষার।
সুস্থতায় দূর্বা ঘাস: মেয়েদের দীর্ঘায়িত এবং অতিরিক্ত মাসিক বা রজঃস্রাব (মেনোরেজিয়া) এবং জরায়ুর স্থানচ্যুতির (ইউটেরাইন প্রোলাপস্) ক্ষেত্রে দূর্বা ঘাস কার্যকর। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা দূর্বা ঘাসের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চার বার পান করার পরামর্শ দেন। এতে মেনোরেজিয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। দূর্বা ঘাসের ক্বাথ জরায়ুর মাংসপেশীর শক্তিবৃদ্ধি করে। অস্বাভাবিক যোনি স্রাব, মূত্রনালীর সংক্রমণ, প্রসূতিদের বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে এবং পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস) এর ক্ষেত্রেও দূর্বা ঘাস উপকারী বলে জানা যায়। মেয়েদের শরীরে পুরুষ হরমোনের আধিক্য ঘটলে যেসব শারীরিক উপসর্গ দেখা যায়, সেকল উপসর্গকে একত্রে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বলা হয়।
শারীরিক জখমে দূর্বা ঘাস: শরীরের ক্ষতস্থানে দূর্বা ঘাস পেস্ট বানিয়ে লাগালে দ্রুত আরোগ্য হয়। এছাড়া নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করতে দূর্বা ঘাসের রস উপকারী।
চর্ম রোগে দূর্বা ঘাস: দূর্বা ঘাসের এন্টিসেপটিক এবং এন্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাই চর্মরোগে যেমন চামড়ায় লাল লাল ফুসকুড়ি, চুলকানি, এটপিক ডার্মাটাইটিস যা একজিমা বা বিখাউজ নামেও পরিচিত, কুষ্ঠ, পাঁচড়া, হার্পিস সিমপ্লেক্স, ত্বকের বিবর্ণতা ইত্যাদি প্রতিরোধে দূর্বা ঘাস উপকারী।
অর্শ্ব রোগে দূর্বা ঘাস: দশ মিনিট হাল্কা আঁচে এক কাপ গরুর দুধের সাথে পরিমাণমত দূর্বা ঘাসের রস আলোড়িত করার মাধ্যমে গরম করে অতঃপর ঠাণ্ডা করে পরিস্রাবনের পর পান করলে অর্শ্বরোগ উপশম হয় বলে জানা যায়।
চোখের সংক্রমণে দূর্বা ঘাস: চোখের সংক্রমণ যেমন চোখ জ্বালাপোড়া, কন্জাঙ্কটিভাইটিস বা চোখ উঠা ইত্যাদি ক্ষেত্রে দূর্বা ঘাস উপকারী। এক্ষেত্রে দূর্বা ঘাস জ্বাল দিয়ে পানিটি ব্যবহার করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
স্নায়ুজনিত রোগে দূর্বা ঘাস: দূর্বা ঘাসের রস স্নায়ুতন্ত্র ছন্দময় রাখতে সাহায্য করে৷ মৃগীরোগের খিঁচুনি ও মানসিক বিকারজাত শারীরিক ব্যাধিতে দূর্বা ঘাস কার্যকররি।
সতর্কীকরণ: উপরে উল্লেখিত পরামর্শগুলো অনুসরণ করার আগে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ব্যাতিত উপরে উল্লেখিত কোন তথ্যের বাস্তবিক প্রয়োগ কাম্য নয়। ঔষধি উদ্ভিদের অপরিপক্ক ব্যাবহার স্বাস্থ্য হানিকর।