বংশগত রোগ থেকে সাবধান
জিন হচ্ছে বংশগতির ধারক ও বাহক। এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের গঠন নির্ধারণ করে। মা-বাবার সব ধরনের বৈশিষ্ট্য সন্তানের মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে বহন করে। এই জিনের অস্বাভাবিকতা, মিউটেশন, ডিএনএ বিন্যাসের অস্বাভাবিকতার ফল হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বংশগত রোগ বা জেনেটিক রোগ।
সবচেয়ে বেশি বংশগত রোগগুলো হচ্ছে—
১. থ্যালাসেমিয়া
২. হিমোফিলিয়া
৩. সিকল সেল এনিমিয়া
৪. ডাওন সিনড্রোম
৫. ডায়াবেটিস
৬. মাসকুলার ডিসট্রফি (মাংসপেশিতে একধরনের দুর্বলতা)
৭. সিস্টিক ফাইব্রোসিস
৮. ব্রেস্ট ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার, কোলন ক্যানসার ইত্যাদি
কাদের জেনেটিক টেস্ট দরকার
১. যাদের আগের বাচ্চার জেনেটিক রোগ আছে, এমন মায়েদের জেনেটিক টেস্ট দরকার।
২. যেসব মা ৩৫ বছরের পরে বাচ্চা নিতে চান।
৩. যেসব পরিবারের জেনেটিক রোগের ইতিহাস রয়েছে।
৪. বাচ্চা গর্ভকালীন যদি খুবই কম বাড়ে।
৫. আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিবাহিত মেয়েদের (চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো ভাইবোন) জেনেটিক টেস্ট দরকার।
৬. যেসব মেয়ের ঘন ঘন বাচ্চা গর্ভপাত হয়ে যায়।
জেনেটিক রোগের জন্য যে টেস্ট করা হয়—
১. ক্রোমোজোমের বিশ্লেষণ : ক্রোমোজোমের বিশ্লেষণ (অ্যানালাইসিস) করা হয়, সাধারণত গর্ভকালীন বাচ্চার কর্ড থেকে রক্ত, ক্রোরিওনিক ভিলাই, এমনিউটিক তরল উপাদান নিয়ে পিসিআর করার মাধ্যমে।
২. কারিওটাইপিং : আমাদের ক্রোমোজোম সংখ্যা ৪৬। সুতরাং ক্রোমোজোম সংখ্যা বেশি না কম, তা এই টেস্ট দিয়ে বোঝা যাবে।
৩. রিকম্বিনেট ডিএনএ টেকনোলজি
৪. রেস্ট্রিকশন ফ্র্যাগমেন্ট অ্যানালাইসিস
৫. হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস : থ্যালামেসিয়া আছে কি না এবং তা কোনো টাইপের নির্ণয় করা যাবে।
৬. ক্লটিং ফ্যাক্টর অ্যানালাইসিস : হেমোফাইলিয়া এ এবং বি নির্ণয় করা যায়।
৭. বিভিন্ন হরমোন টেস্ট, যেমন—থাইরয়েড হরমোন, গ্রোথ হরমোন, সেক্স হরমোন লেভেল দিয়ে হরমোনাল রোগগুলো নির্ণয় করা।
জেনেটিক ডিজিজ প্রতিরোধের উপায়
বংশগত রোগের ক্ষেত্রে মা-বাবা দুজনের জিন থেকে অসুখ দেখা দেয় অথবা মা-বাবা কোনো একজনের জিন থেকেও অসুখ হতে পারে। ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই বংশগত সমস্যা হতে পারে।
১. বংশগত রোগ প্রতিরোধে চাচাতো, মামাতো, ফুফাতোসহ নিকটাত্মীয়ের কাউকে বিয়ে না করা।
২. মেয়েদের ৩৫ বছরের পরে বাচ্চা না নেওয়া।
৩. বংশগত রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকলে বাচ্চা না নেওয়া।
৪. বিয়ে বা বাচ্চা নেওয়ার আগে জেনেটিক কাউন্সেলিং করলে বংশগত রোগ হতে মুক্ত থাকা যাবে।
৫. আপনার জন্য যেন আপনার সন্তান পরবর্তীকালে বিপদে না পড়ে, সে জন্য আগের প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।