পাকস্থলির আলসার ভালো হয় ১৬টি খাবারে
যে কোনো বয়সী মানুষই আলসার বা পেটের ঘা-তে আক্রান্ত হতে পারেন। পাকস্থলির আবরণে এই খোলা লোমকুপের মতো ঘা হয়। হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে এই আলসার হয়।
কেউ যদি টানা দীর্ঘদিন ধরে অ্যাসপিরিন এবং ইবুপ্রোফেন বা অ্যাস্টেরয়েড ভিন্ন কোনো প্রদাহজনিত ওষুধ ব্যবহার করেন তাহলেও পাকস্থলিতে আলসার হয়।
আলসার হলে ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হয় এবং বিশেষ কিছু খাবার নিয়মিতভাবে খেতে হয়।
কিছু খাবার আছে আলসার সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া হেলিকোব্যাকটার পাইলোরির বিরুদ্ধে লড়াই করে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এমন ১৬টি খাবারের কথা।
১. ফুলকপি
এতে আছে সালফোরাফেন নামের একটি উপাদান যা হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামের ওই ব্যাকটিরয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ যদি প্রতিদিন দুবার করে ৭দিন ফুলকপি খান তাহলে তার পাকস্থলিতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি ৭৮% কমে আসে।
২. বাধাকপি
এতে আছে ভিটামিন ইউ নামের পরিচিত এস-মিথাইল মিথিওনাইন নামের একটি উপাদান যা আলসারের ক্ষতা সারিয়ে তুলতে পারে। পাকস্থলিতে পিএইচ এর মাত্রায় হেরফের হলে আলসার হয়। আর এই ভিটামিন দেহে ক্ষারক বাড়ায়। এছাড়া এতে আরো আছে অ্যামাইনো এসিড গ্লুটামিন যা আলসার সারতে সহায়ক।
৩. মুলা
এতে আছে আঁশ যা হজমে সহায়ক। এছাড়া জিঙ্ক এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান শুষে নেয় মুলা। মুলা পাকস্থলির প্রদাহরোধ করে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যাও দূর করে।
৪. আপেল
প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে আলসার দূর হয়ে যাবে। এতে আছে এমন সব ফ্ল্যাভোনয়েড যা আলসার সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্ম প্রতিরোধ করে।
৫. ব্লুবেরি
সকালে ব্লুবের খেলে পাকস্থলির আলসার দূর হয়। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পুষ্টি উপাদান যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে এবং আলসারের ঘা দ্রুত সারিয়ে তুলবে।
৬. র্যাস্পবেরি
এতে আছে উচ্চ মাত্রার ফেনোলিক উপাদান। এছাড়া খাদ্য আঁশেরও বড় উৎস এটি। যা খাবার হজম এবং পাকস্থলির প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
৭. স্ট্রবেরি
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, পাকস্থলির আলসারের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করতে পারে স্ট্রবেরি। এতে আছে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহকে আলসার থেকে প্রতিরক্ষা দেয়। প্রতিদিন এক কাপ করে স্ট্রবেরি খেলে আলসারের ঘা সেরে যায় দ্রুত।
৮. বেল পিপার বা ক্যাপসিকাম
মিষ্টি ক্যাপসিকাম পেপটিক আলসার দূর করতে কার্যকর।
৯. গাজর
পাকস্থলির আবরণ শক্তিশালী করতে বেশ কার্যকর গাজর। এতে আছে ভিটামিন এ যা আলসার, প্রদাহ বা বদহজম দূর করে।
১০. ব্রোকোলি
এতে সালফোরাফেন নামের এমন এক ধরনের রাসায়নিক আছে যা আলসার সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে।
১১. দই
এতে আছে প্রোবায়োটিকস, ল্যাকটোবেসিলাস এবং এসিডোফিলাস যা আলসার সারায়। এছাড়া এটি হজম প্রক্রিয়ায় ভালো এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।
১২. অলিভ অয়েল এবং অন্যান্য উদ্ভিদভিত্তিক তেল
অলিভ অয়েলে আছে ফেনল যা ব্যাকটেরিয়ারোধী উপাদান হিসেবে কাজ করে। যা হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামের ব্যাকটেরিয়াকে আরো ছড়িয়ে পড়তে বাধা দেয়।
১৩. মধু
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ানো এবং ক্ষত সারানোর পাশাপাশি মধু পাকস্থলির আলসারও সারায়। আলসার সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া হেলিকোব্যাকটার পাইলোরির উৎপাদন প্রতিরোধ করে মধু। প্রতিদিনি সকালে এক টেবিল চামচ মধু খান।
১৪. রসুন
এক কোষ রসুনই হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামের ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধে যথেষ্ট। এতে আছে জীবাণু নাশক উপাদান যা আলসার সারিয়ে তুলতে সহায়ক। ভলো ফল পাওয়ার জন্য প্রতিদিন ২-৩ কোষ রসুন খান।
১৫. ক্যাফেইনমুক্ত গ্রিন টি
এতে আছে ইসিজিসি নামে ক্যাটেচিন এর উচ্চ মাত্রা যা আলসার সারায়। এর প্রদাহরোধী এবং পঁচনরোধী উপাদান আলসারের সারাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় এক কাপ করে গ্রিন টি পান করুন।
১৬. যষ্টিমধু
প্রাচীনকাল থেকেই ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এটি। আলসার এবং গ্যাস্ট্রিটিস এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে যষ্টিমধু। এর প্রদাহরোধী উপাদান পাকস্থলিতে প্রদাহ কমায়।
এছাড়া নিয়মিত শাক-সবজি খেলেও আলসার দ্রুত ভালো হয়। আপনি যদি আলসারের জন্যা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খান তাহলে পাশাপাশি প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবারও থেকে হবে নিয়মিত। এতে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা বাড়বে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমবে।
বিফিডোব্যাকটেরিয়াম, স্যাক্কারোমাইসেস এবং ল্যাকটোবেসিলাস নামের প্রোবায়োটিক ওষুধগুলো এ ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক হতে পারে।