ব্যাঙটি খান, সময় বাচাঁন!
মার্ক টোয়েনের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে, “সকালে নাস্তায় একটা জীবন্ত ব্যাঙ খেয়ে ফেলুন আর নিশ্চিন্ত থাকুন, সারাদিন আর যাই ঘটুক; দিনের শুরুটার চেয়ে বাজে কিছু ঘটতে যাচ্ছে না অন্তত!” মানডে ডট কম ব্লগে সম্প্রতি লেখক লরা ব্লাইন্ডার ব্যক্তিগত উৎপাদনক্ষমতা বা প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে এবং দিনের ২৪ ঘণ্টা সময়কে সঠিকভাবে বণ্টন করতে অন্য এক লেখক ব্রায়ান ট্রেসির মস্তিষ্কপ্রসূত নতুন একটি ধারণা তুলে ধরেন। তিনি এ কৌশলের নাম দিয়েছেন ‘ইট দ্যাট ফ্রগ’। বোঝাই যাচ্ছে পুরো বিষয়টি মার্ক টোয়েনের উক্তি থেকেই অনুপ্রাণিত! ব্রায়ান ট্রেসি এ নিয়ে ‘ইট দ্যাট ফ্রগ! টুয়েন্টিওয়ান গ্রেট ওয়েজ টু স্টপ প্রোক্রাস্টিনেটিং অ্যান্ড গেট মোর ডান ইন লেস টাইম’ নামে আস্ত একটি বই ছাপিয়ে ফেলেছেন!
দীর্ঘসূত্রিতা অনেকেরই জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। খুব অল্প কয়েকদিন হয়তো বাকি আছে কঠিন কোনো অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার, চটপট কাজে না লেগে শুরুতেই কপালে হাত দিয়ে বসি, ‘হায় খোদা, কেমনে করিব এ অসাধ্য সাধন!’ অনেক সময় দেখা যায়, এরকম দুশ্চিন্তা করে করেই ব্যয় করছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা! আবার ধরুন, বেসিনে পড়ে আছে আগেরদিনের এঁটো থালাবাসন; হয়তো বসে বসে ফেসবুক স্ক্রল করেই যাচ্ছি আর নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছি, থালাবাসন তো আর উড়ে যাচ্ছে না, পরেও ধোয়া যাবে। যদিও সবাই জানি, এ হলো ক্ষণিকের স্বস্তিমাত্র, যা পরবর্তীতে জীবনকে আরো কঠিন করে দেয়! এই বদ অভ্যেসটিকে চিরতরে যারা ঝেড়ে ফেলতে চান, তাদের জন্যই ব্রায়ান ট্রেসির এ আইডিয়া।
তবে এর মানে এই নয় যে, সকালে উঠেই ব্যাঙ খাওয়ার মত আজগুবি কাজ করতে হবে! বরং, দিনের কাজগুলোর মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণটিই হলো আপনার ‘ব্যাঙ’। ট্রেসি তার বইয়ে আরো লেখেন, ‘ব্যাঙ’ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরো প্রাধান্য দিন কোন কাজটি জীবনে সবচেয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, সেটিকে। এ প্রক্রিয়ায় সময় ব্যবস্থাপনার জন্য রয়েছে সাতটি ধাপ –
১. এই মুহূর্তে নিজের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যটি স্থির করুন।
২. সেটিকে একটি খাতায় লিপিবদ্ধ করুন।
৩. একটি সময়সীমা (ডেডলাইন) নির্ধারণ করুন।
৪. ওই লক্ষ্যটিতে পৌঁছুতে হলে কি কি ধাপ অতিক্রম করতে হবে, তার একটি তালিকা তৈরি করুন।
৫. সেই ধাপগুলোর কোনো কোনোটি নিশ্চয় অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে, আবার কোনো কোনোটি কম। গুরুত্বের ভিত্তিতে ধাপগুলোকে উপর থেকে নিচে ক্রমান্বয়ে সাজান।
৬. কাজে লেগে পড়ুন। এতক্ষণ যা কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো এখন তাকে বাস্তবায়ন করতে নিজের সেরাটা ঢেলে দিন।
৭. ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি। প্রতিদিনই অন্তত কিছু না কিছু করার চেষ্টা করুন যা লক্ষ্যের দিকে অল্প অল্প করে এগিয়ে নিয়ে যায়।
মার্ক টোয়েনের ব্যাঙ এর সঙ্গে ব্রায়ান ট্রেসির এ প্রক্রিয়ার সামাঞ্জস্য হলো- উপরোক্ত ধাপগুলিও সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই সম্পাদন করা জরুরি, যাতে সারাদিন ব্যাপী কাজের স্পৃহা বজায় থাকে। অবশ্য এ তালিকা নির্ভর প্রক্রিয়াটি যে সবার ক্ষেত্রে কাজ করবে এমনটি নয়। লরা নিজেও তার ব্লগে লিখেছেন, তিনি মাত্র দু’দিন এ প্রক্রিয়ায় কাজ করার পরই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এর কারণ হয়তোবা এই, প্রত্যেকের আগ্রহের জায়গাটি ভিন্ন ভিন্ন। তাই অনেকেই সকালে কাগজ কলম নিয়ে বসে ‘ইট দ্যাট ফ্রগ’ পদ্ধতি অবলম্বন করে বেশ ভালো ফল পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন! আর যাদের ক্ষেত্রে এটি কাজ করবে না, তাদের জন্য সময় ব্যবস্থাপনার আরো বেশ কিছু স্বীকৃত পন্থা তো রয়েছেই! এদের মধ্যে ‘পম্পোডরো টেকনিক’ বেশ বিখ্যাত। সেটি নিয়ে আলোচনা হবে অন্য এক সময়!
(মেন্টাল ফ্লস অবলম্বনে)