সবচেয়ে ক্ষতিকর অভ্যাস ধূমপান ও মদপান!
মানুষের জীবনে সবচেয়ে ক্ষতিকর ও বাজে অভ্যাস তামাকজাতপণ্য গ্রহণ, ধূমপান ও মদপান। কারণ এগুলো মানুষকে অব্যহতভাবে নেশাগ্রস্থ করে এবং সরাসরি মস্তিষ্কো অপ্রয়োজনীয়ভাবে উত্তেজিত করে। খুব সচেতনতার সাথে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের পরও ধূমপান ও মদপান ত্যাগ না করলে কিছু রোগ প্রতিরোধ করা যাবে না। কারণ এ দুটি উপাদান গ্রহণের ফলে শরীরে এনজাইম অতিরিক্ত ব্যবহার হয় বা শরীরে কাজ করতে বাধাগ্রস্থ হয়। তামাক ও মদ দেহে অ্যাসিডের পরিমান বাড়ায় যা নানা রকম রোগ সৃষ্টিতে সহায়ক।
ধূমপান দেহের শিরাগুলো সংকোচন করে দেয় এবং অতি সুক্ষ শিরাগুলোতে রক্তপ্রবাহ, দেহে অক্সিজেন প্রবাহ এবং পুষ্টিপ্রবাহ মারাত্মক বাধাগ্রস্থ করে। এ কারণে দেহবর্জ্য প্রয়োজনীয় মাত্রায় বের হতে না পেরে দিনদিন বর্জ্য পরিমাণ বাড়তে থাকে। ধূমপানে শুধু ফুসফুসের কার্জক্ষমতা কমতে থাকে তা নয়, বরং শিরা উপশিরাগুলো সঙ্কুচিত হয়, অতিরিক্ত এনজাইম ব্যবহৃত হয়, শরীরে অ্যাসিড বেড়ে যায়, অক্সিজেন স্বল্পতা দেখাদেয়; ফলশ্রুতিতে চরম শক্তিঘাটতি দেখা দেয়।
যেসমস্ত বস্তুর ব্যবহার বাদ দিলে অকাল মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস করা যায় তামাক এর মধ্যে শীর্ষে। যত লোক তামাক ব্যবহার করে তার প্রায় অর্ধেক এর ক্ষতিকর প্রভাবে মৃত্যুবরণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, প্রতিবছর সারাবিশ্বে প্রায ৬০ লাখ লোক তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবে মারা যায় (সর্বমোট মৃত্যুর প্রায় ১০%) যার প্রায় ৬ লাখ পরোক্ষ ধূমপানের স্বীকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন সেন্টারও এটাকে বিশ্বব্যাপী অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
তামাক মূলত হৃৎপিণ্ড, লিভার ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। ধূমপানের ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) (এমফাইসিমা ও ক্রনিক ব্রংকাইটিস), ক্যান্সার (বিশেষত ফুসফুসের ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার, ল্যারিংস ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার) এর ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়। তামাক উচ্চ রক্তচাপ ও প্রান্তীয় রক্তনালীর রোগ সৃষ্টি করে।
গর্ভবতী নারীদের উপর তামাকের ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। ধূমপায়ী নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভপাত ঘটার হার বেশি। এছাড়া গর্ভস্থ ভ্রূণেরও অনেক ক্ষতি করে- যেমন অকালে শিশুর জন্ম হওয়া (প্রিম্যাচুর বার্থ), জন্মের সময় নবজাতকের ওজন আদর্শ ওজনের তুলনায় কম হওয়া (LBW) ও সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিন্ড্রোম (SIDS) এর হার বেশি । ধূমপাযীদের ক্ষেত্রে যৌন অক্ষমতায় আক্রান্তের আশঙ্কা বেশি।
ধূমপানের মতো মদপানের ক্ষতিকর প্রভাবগুলোও একই। তবে মদপান লিভার ও মস্তিষ্ক আরো বেশি বিষিয়ে তোলে। এর পাশাপাশি বিষণ্নতা (depression)মারাত্মক আকার ধারণ করে।
শারীরিক জটিল সমস্যাগুলোর অন্যতম প্রধাণ কারণ এই দুটি বদ অভ্যাস। এরা দেহকোষগুলোর কার্যক্ষমতা ধীরেধীরে কমায়, আর মানুষ অসুস্থ হতে থাকে। এখন প্রশ্ন করতে পারেন, অনেকেই ধূমপান করেন না কিন্তু তারাও রোগাক্রান্ত হচ্ছেন? উত্তর হলো- তারা অন্যকোনোভাবে অস্বাস্থকর খাদ্যগ্রহণ এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করছেন।