মালিকের মৃত্যুতে বুক ভাসালো ঘোড়া
মালিকের কফিনে মাথা ঠেঁকিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে ঘোড়াটি |
মালিকের মৃত্যুতে কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিল তার পোষা ঘোড়া। মালিকের জন্য ঘোড়ার কান্না দেখে অশ্রু ধরে রাখতে পারেনি অনেক মানুষও।
অনেকদিন ধরে মালিকের সঙ্গে ছিল ঘোড়াটি।কোনদিন ভাবতেই পারেনি মালিক তাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যাবে। সম্প্রতি মালিক মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তাই বুকফাঁটা কান্নায় ভেঁঙে পড়েছে ঘোড়াটি।
ওয়াগনার কখনও নিজের ঘোড়া ছাড়া এক মুহূর্ত কোথাও থাকেননি ওয়াগনার। এবার সেই ঘোড়াকে একা রেখেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন
ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলের পারাইবা নামক অঞ্চলে। মৃত মালিকের নাম ওয়াগনার ডি লিমা ফিগিওরিডো। পোষা ঘোড়াটিকে তিনি সেনেরো বলে ডাকতেন।
গত ৫ জানুয়ারি এক সড়ক দুর্ঘটনায় ওয়াগনার ডি লিমা মারা গেছেন। কিন্তু মালিকের মৃত্যু সহ্য করতে পারেনি ঘোড়াটি। যখন তার সামনে মালিকের কফিন আনা হয় তখন তাতে মাথা লাগিয়ে কেঁদে ভাসিয়েছে ঘোড়াটি।
ওয়াগনার ডি লিমার আত্মীয়স্বজন জানান, সেরেনো ও ওয়াগনারের খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল। সব সময় তারা এক সঙ্গে থাকতেন। এ ঘোড়া নিয়ে অনেক ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন ওয়াগনার ডি লিমা। তার ঘরে এখন পড়ে আছে অনেক ট্রফি যা এ ঘোড়া নিয়ে জিতেছেন ওয়াগনার ডি লিমা। হয়তো সেই স্মৃতিই আজ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ঘোড়াটিকে। অবলা প্রাণিও আজ বুঝছে তার বন্ধু তাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে। কোনোদিন তার সঙ্গে দেখা হবে না। কোনো প্রতিযোগিতায় অংশও নেওয়া হবে না। তাকে কোনো পুরস্কারও এনে দিতে পারবে না সে।
ওয়াগনার ওয়াগনারের ভাই ওয়ান্ডো ডি লিমা ঘোড়াটিকে ওয়াগনারের কফিনের কাছে নিয়ে এসেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এখন থেকে ঘোড়াটিকে দেখাশোনা করবেন তিনি
মালিক ওয়াগনার ডি লিমার অনুপস্থিতিতে তার ছোট ভাই ওয়ান্ডো ডি লিমা শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে ঘোড়াটিকে নিয়ে আসেন।
ছবিতে দেখা যায়, যখন মালিকের মৃতদেহ বহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন ঘোড়াটি পায়ের খুর দিয়ে বার বার মাটিতে আঘাত করছিল। সেই সঙ্গে বার বার ছোট বাচ্চার মত ডুকরে কাঁদছিল ঘোড়াটি।
ওয়াগনার ডি লিমা ও ঘোড়ার বন্ধুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ ঘোড়াই ছিল ওয়াগনার ডি লিমার সবকিছু্। মালিকের মৃত্যুর এ হৃদয় বিদারক দিনে ঘোড়াটিও প্রমাণ করছে, সেও তার মালিককে কতটা ভালোবাসতো। ভাইয়ের লাশ সমাধির কাছে নিয়ে যাওয়ার সময় বার বার ডুকতে কেঁদে উঠছিল ঘোড়াটি। মালিককে শেষ বিদায় জানাতে কষ্ট হচ্ছিল তার।’
ওয়াগনার ডি লিমা ও তার ঘোড়া সব সময় এক সঙ্গে থাকতেন। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস, দুর্ঘটনার সময় তার সঙ্গে ছিল না ঘোড়াটি। সমুদ্রসৈকতে মটরসাইকেল চালানোর সময় হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি মাটিতে পড়ে যান। দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওয়াগনার মালিকের মৃত্যুতে ডুকরে কেঁদে উঠছে সেরেনো। তা দেখে অনেক মানুষও তার সঙ্গে কেঁদেছেন
ফ্রান্সিলিয়ো লিমিয়েরা নামে ওয়াগনারের এক আত্মীয় বলেন, ‘ঘোড়াটির এক অবিশ্বাস্য আচরণ দেখলাম। পোষা ঘোড়া তার মালিককে কতটা ভালোবাসতে পারে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না। যখন ওয়াগনারের কফিন ঘোড়ার সামনে দিয়ে নিয়ে আসছিলাম তখন মনে হচ্ছিল ঘোড়াটিও তার প্রাণপ্রিয় মালিককে চোখের জলে ভাসিয়ে শেষ বিদায় জানাচ্ছে। সেও বার বার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে। বার বার পায়ের খুর দিয়ে মাটিতে আঘাত করছে। এটা খুবই হৃদয় বিদারক।’
ওয়ান্ডো ডি লিমা তার মৃত ভাই ও পোষা ঘোড়া সম্পর্কে জানান, এমনও দিন গেছে, যেদিন ঘোড়ার খাবার কেনার জন্য সে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা থেকে বিরত থেকেছে। অনেকে ঘোড়াটিকে কেনার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সে কোনোভাবেই বিক্রি করতে চায়নি। কারণ ঘোড়াটি তার প্রাণ। আজ তাকেই ছেড়ে চলে গেল সে।
এতদিন মালিক ছিল, তাই কোনোকিছুর অভাববোধ করেনি ঘোড়াটি। কিন্তু এখন তার কি হবে; সে এখন কার কাছে থাকবে। তাই অনেকে ঘোড়াটি নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে।
তবে ওয়ান্ডো ডি লিমা জানিয়েছেন, এটা তার ভাইয়ের ঘোড়া। এতদিন যেভাবে তাদের পরিবারে আদরের সঙ্গে ছিল এখনও সেই আদরের সঙ্গেই থাকবে।
ভিডিও: