হাজার সমস্যার একটাই সমাধান ডিমে!
স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তায় চুল ছিঁড়েননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। অপেক্ষাকৃত কম স্বাস্থ্যের মানুষ স্বাস্থ্য বাড়ানোর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বেছে নেন ডিম। আর নেবেনই না কেন? ডিমের পুষ্টিগুণ তো সবারই জানা!
মেসে যারা থাকেন, তাদের সবার কাছে ডিমের কদরটা একটু বেশিই। সপ্তাহে কমপক্ষে তিন থেকে চারদিন তো অনিচ্ছা সত্ত্বেও ডিম ভক্ষণ করে তুষ্ট থাকতে হয় ব্যাচেলরদের। রাস্তার মোড়ে, অলিতে গলিতে এখন পড়ন্ত বিকেল কিংবা সন্ধ্যে হলেই সেদ্ধ ডিম নিয়ে বসেন হকার। স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীলরা অনায়াসেই ভীড় জমান সেখানে। টপ করে দু-একটা ডিম গিলেই আবার ফিরে যান নিজের জানা পথে।
ডিমের প্রতি মানুষের এমন আগ্রহ কেন? বহুমূখী উপকারিতা আছে তাতে। এমন খবরই দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। আজ ১৩ই অক্টোবর। বিশ্ব ডিম দিবস। বিশ্বের ১৪টি দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি।
এই বিষয়গুলোর উপর ভিডিও বা স্বাস্থ্য বিষয়ক ভিডিও দেখতে চাইলে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি ঠিকানা: – YouTube.com/HealthDoctorBD
কেমন উপকারিতা আছে ডিমে? এই যেমন প্রথমেই আসা যাক, ডিম চোখের জন্য ভাল। চোখের জন্য গাজরের উপকারিতার কথা সবার জানা। কিন্তু চোখের জন্য ডিম গাজরের চেয়ে কোনো অংশেই কম উপকারী নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ডিম খান, তাদের চোখে সহজে ছানি পড়ে না।
ভিটামিনে ভরা প্রতিটি ডিম। এর ভিটামিন বি ১২ খাবারকে এনার্জি বা শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। এর ‘ভিটামিন এ’ দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। ডিমের কেরোটিনয়েড, ল্যুটেন ও জিয়েক্সেনথিন বয়সকালের চোখের অসুখ ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।
যারা বাড়তি ওজন নিয়ে খুব বেশি চিন্তায় ভোগেন তাদের সমাধানও দিচ্ছে ডিম। ডিমের সবচেয়ে বড় গুণ এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। সকালের নাস্তায় রোজ একটি ডিম মানে সারাদিন আপনার ক্ষুধা কম হবে, খাওয়া হবে কম। গবেষণায় দেখা যায় শরীর থেকে দিনে প্রায় ৪০০ ক্যালোরি কমাতে পারে সকালে একটি ডিম খাওয়া। তার মানে মাসে ওজন কমার পরিমাণ প্রায় তিন পাউন্ড। সমীক্ষা বলছে, ৬৫% বডি ওয়েট, ১৬% বডি ফ্যাট, ৩৪% কোমরে জমে থাকা মেদের পরিমাণ কমাতে পারে ডিম!
ডিমের প্রোটিন শরীর গঠন করে। আর প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে অ্যামিনো অ্যাসিড। একুশ ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড এই কাজে প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু আমাদের শরীর অতি প্রয়োজনীয় নয়টি অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি করতে পারে না। তার জন্য আমাদের প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নিতে হয়। খাবারের মধ্যে এই প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট হল ডিম। যা ঝটপট শরীরে প্রোটিন উত্পাদন করতে পারে।
এমন অনেকে আছেন যারা নখের ভাঙনের সমস্যায় ভোগেন। চোখ বন্ধ করে রোজ ডিম খেয়ে যান। ডিমের মধ্যে থাকা সালফার ম্যাজিকের মতো নখ আর চুলের মান উন্নত করবে।
সেদ্ধ ডিমে আছে ভিটামিন ডি যা হাড় ও দাঁত শক্ত করে। ভিটামিন ডি খাবার থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে সহায়তা করে এবং রক্তের ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে শরীরের হাড়ের কাঠামো মজবুত ও শক্ত হয় এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ হয়। প্রতিদিন সকালের নাস্তায় একটি সেদ্ধ ডিম খেলে ৪৫ আন্তর্জাতিক ইউনিট ভিটামিন ডি পাওয়া যায় যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
মুখের অবাঞ্ছিত লোমকুপ কমাতে ডিমের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে ফেটে পরিষ্কার ত্বকে মাখুন। ২০/২৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক ক্লিন হবে।
হাফিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে পুষ্টিবিদ লিজ উলফি ডিমের কুসুম খাওয়ার লাভ-লোকসান নিয়ে কথা বলেছেন। তার মতে, ডিমের কুসুম না খেলে লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি। কেননা, কুসুম না খেলে ভালো মানের পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হবেন আপনি। কুসুম খেলে শারীরিক ক্ষতির ঝুঁকি নিয়েও বিশদ আলোচনা করেছেন উলফি।
তিনি জানান, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টরলের উত্স কুসুম নিয়ে হইচই শুরু হয় বিশ শতকের গোড়ায় নিকোলাই আনিচকভের গবেষণার পর। আনিচকভ খরগোশের ওপর এ নিয়ে পরীক্ষা চালান এবং দেখেন, কোলেস্টরলে হূদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ওই গবেষণার ফল চ্যালেঞ্জ করে লিজ উলফি বলেন, ‘খরগোশের সঙ্গে মানুষের শরীরের তেমন কোনো সাধারণ মিল নেই। আর কোলেস্টরল ওদের ডায়েটের অংশও নয়।’ কিন্তু ওই গবেষণাই ডিমের কুসুমের বিষয়ে প্রচারণার ভিত্তি।