যৌবন ধরে রাখার রহস্য বেদানায়
একটা সময় অভিজাতমহলে দারুণ কদর ছিল বেদানার। তখন ফলটা এত সহজলভ্যও ছিল না। ফলের ঝুড়ির সৌন্দর্য বাড়াতে বেদানা সাড়ম্বরেই তখন জায়গা করে নিত। এখন বেদানা সহজলভ্য। প্রায় সব ফলের দোকানেই পাওয়া যায়।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যৌবন ধরে রাখতে হলে এবং শরীরকে বার্ধক্যের ছাপ থেকে দূরে রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী হলো এই বেদানা ফল। প্রথমেই এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কী কী পুষ্টিগুণ রয়েছে এই ফলে। ১০০ গ্রাম বেদানার দানায় থাকে—
ফ্যাট— ১.২ গ্রাম
প্রোটিন— ১.৭ গ্রাম
কোলেস্টেরল— ০ গ্রাম
সোডিয়াম— ৩ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম— ২৩৬ মিলিগ্রাম
কার্বোহাইড্রেট— ১৯ গ্রাম
এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন। নিচের ছবিটিতে রয়েছে সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ তালিকা—
একটি সুইস গবেষক দলের সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে যে বেদানার রস শরীরের পুরনো এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া কোষকে দূরীভূত করে এবং নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।
কোষের ভিতরে মাইটোকন্ড্রিয়া কোষকে শক্তি জোগায়। এই রডের মতো দেখতে অংশটি যখন নষ্ট হতে থাকে তখন কোষগুলোও আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়। সুইস বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, বেদানার রসের পাচন থেকে উৎপন্ন ‘ইউরোথিলিন এ’ এই মাইটোকন্ড্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে সক্ষম।
আর কোষের মূল শক্তির উৎস যদি উজ্জীবিত হয় তবে সেই কোষ শরীরের যে অঙ্গে অবস্থিত সেই অঙ্গটি সুস্থ এবং তরতাজা থাকবে সেটি ত্বক হতে পারে, লিভার বা কিডনিও হতে পারে। শরীরের সমস্ত প্রত্যঙ্গ যদি সুস্থ এবং সতেজ থাকে তবে বার্ধক্যকে অবশ্যই ঠেকিয়ে রাখা যাবে।
এতে আছে প্রচুর খনিজ। তাই যাদের রক্তশূন্যতা আছে, তাদের জন্য খুব ভালো। এছাড়া আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ ভিটামিন এ, সি, ই প্রভৃতি পুষ্টি উপাদান।
সুস্বাস্থ্যের জন্য: বেদানার রস হৃদপিণ্ডের মাংসপেশিতে দ্রুত অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ প্রতিরোধেও এটি কার্যকর। এক গবেষণায় দেখা গেছে, টানা তিন মাস নিয়ম করে বেদানার রস খেলে স্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়।
ঠাণ্ডা-কাশিতে: ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হলে বেদানার রস খেতে পারেন। যখন খুব কাবু হয়ে যাবেন ঠাণ্ডায়, সারা দিন ধরে একটু একটু করে বেদানার রস খেয়ে নিন। দিন শেষে পার্থক্যটা নিজেই বুঝবেন।
দাঁত সুরক্ষায়: বেদানায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দাঁতে প্লাক জমতে বাধা দেয়। এছাড়া মাড়ির জিনজিভাইটিস রোগ প্রতিরোধেও বেদানার ভূমিকা অপরিসীম। তাই দাঁত সুরক্ষায় বেদানা খান।
ত্বক সুরক্ষায়: বেদানা ত্বকে সুরক্ষা বন্ধনী তৈরি করে। ত্বকে নতুন কোষ উৎপাদনকারী উপাদান থাকে বেদানায়। এছাড়া চোখের নিচে পড়া বয়সের ছাপ দূর করতে পারে এ ফল।
হাড়ের জন্য: বেদানায় আছে পটাশিয়াম ও পলিফেনল, যা হাড় ও হাড়ের সংযোগস্থলের কার্টিলেজের জন্য খুব উপকারী। তাই নিয়মিত বেদানা খেলে অস্টিওপোরেসিসসহ হাড়ের নানাবিধ রোগ এড়ানো যায়।