বিয়ের জন্য মেয়েদের হাটে তোলেন আইরিশরা! (ভিডিও)
স্থানীয় হাটে বর খুঁজতে যাচ্ছেন আইরিশ দুই তরুণী। আকর্ষণীয় সাজে নিজেদের সাজিয়েছেন তারা |
আধুনিক যুগেও কিছু সম্প্রদায় আছে যারা যাযাবরের মতো জীবনযাপন করতে ভালোবাসে। তারা সারা পৃথিবীকেই নিজেদের মনে করে। তাই কোনো স্থানে স্থায়ী বসবাস করে না। একস্থান থেকে আরেক স্থানে ছুটে বেড়ায়।
এমনই এক গোষ্ঠী আয়ারল্যান্ডের যাযাবরেরা। তারা তাদের ছোট গাড়ি বা কারাভ্যানে করে এখানে সেখানে বসবাস করে। সরকার তাদেরকে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগ দিচ্ছে। অথচ তারা সে সুযোগ নিচ্ছে না। তারা মনে করে এটাই তাদের ঐতিহ্য। এভাবে হাজার হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসছে তাদের পূর্বপুরুষরা।
নিজেদের কারাভ্যানের পাশে খেলনা সিগারেট নিয়ে পোজ দিচ্ছে কয়েকজন শিশু। ক্যামেরায় পোজ দিতে পেরে তারা খুবই খুশি
অনুষ্ঠানে বর খুঁজতে যাবেন দুই তরুণী। তাই আকর্ষণীয় সাজে নিজেকে সাজিয়েছে তারা। পাশের ছবিতে বড় গামলায় বসে গোসল করছে এক শিশু
খেলনা পিস্তল নিয়ে ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় তাক করেছে দুই শিশু
আইরিশ যাযাবররা বড় ক্যারাভানে পুরো পরিবার নিয়ে শহর থেকে শহরে, গ্রাম থেকে গ্রামে ভ্রমণ করেন বেড়ায়। তাই তাদেরকে আয়ারল্যান্ডের ভ্রমণকারী জনগোষ্ঠী হিসেবেও মনে করা হয়। তবে এভাবে ছন্নছাড়া জীবনযাপন করলেও তাদের জীবনব্যবস্থা খুবই আকর্ষণীয়। তাদের জীবনযাপন দেখলে সত্যিই অবাক হতে হয়। আমাদের ধারণা যাযাবররা খুবই গরিব, ভালোভাবে বাঁচতে পারে না। কিন্তু বাস্তবে তাদের জীবনব্যবস্থা খুবই্ উন্নত ও আকর্ষণীয়।
জেমি জনসন নামের এক ফটোগ্রাফার দীর্ঘদিন সেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে বসাবাস করে তাদের জীবনব্যবস্থা খুব কাছে থেকে দেখেছেন। তবে তারা খুব সহজে অন্য কোনো সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে চান না। কিন্তু জেমি জনসন কিছুদিনের মধ্যে তাদের আস্থা অর্জন করেছিলেন। এ সুযোগে তাদের খুব কাছে থেকে কিছু ছবি তুলেছেন যেগুলোতে তাদের বাস্তব জীবনব্যবস্থা ফুটে উঠেছে।
নিজেদের কারাভ্যানের সামনে আকর্ষণীয়ভাবে পোজ দিয়েছে কয়েকটি শিশু। এই যাযাবর সম্প্রদায়ের জীবনব্যবস্থা খুবই উন্নত
বামের ছবিতে এক মেয়েশিশু খেলনা সিগারেট নিয়ে আর ডানের ছবিতে এক শিশু ধারালো অস্ত্র নিয়ে ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়েছে
স্বামী পছন্দ করতে যাবেন তারা। তাই তারা একে অপরকে সাজিয়ে দিচ্ছে
নিজের পোষা ঘোড়ার সামনে পোজ দিয়েছে এক শিশু। অন্য ছবিতে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে অপর শিশু
যাযাবর সম্প্রদায়টি তাদের পরিবার ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি খুব সচেতন। কোনোভাবেই তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে প্রতারণা করে না। পূর্বপুরুষদের নীতি মেনে হাজার বছর ধরে একইভাবে বসবাস করে আসছে তারা।
তবে দিন যত গড়াচ্ছে তাদের জনসংখ্যা তত কমে আসছে। কালের বিবর্তনে অনেক মানুষ হারিয়ে গেছে। তারপরও সম্প্রদায়টি তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আয়ারল্যান্ড সরকার তাদেরকে একস্থানে বসবাস করার অনুরোধ করলেও তারা তা শুনছে না। তাদের যুক্তি হাজার বছর ধরে চলে আসা তাদের পূর্ব পুরুষরা যেভাবে বসবাস করেছেন তারাও ঠিক সেভাবে বসবাস করবে।
কারাভ্যানের জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে ভাইবোন। তারা ঘোড়া উৎসবে যাচ্ছে
মাথায় তারকাখোচিত ডিজাইন করেছে এক শিশু। তারাও আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত
বামে তিন শিশুকে নিয়ে বিভিন্ন রকমের পোজ দিয়েছেন এক মা। ডানে এক শিশু তার ছোট্ট কুকুরকে হাতে নিয়ে ক্যামেরায় পোজ দিয়েছে
নিজেদের কারাভ্যানের সামনে দুই শিশু
কিন্তু যাযাবর জীবনযাপনের জন্য গোষ্ঠীটিকে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। অনেক সময় তাদের ন্যূনতম অধিকারটুকু পায় না। তাদেরকে প্রকৃত নাগরিক থেকে আলাদা মনে করা হয়। কিন্তু তারা দাবি করে, তারাই আয়ারল্যান্ডের প্রকৃত নাগরিক। কারণ তারা যুগযুগ ধরে সেদেশে বসবাস করে আসছে।
তারা অনেকবার আয়ারল্যান্ড সরকারের কাছে আদিবাসী স্বীকৃতি নিতে আবেদন করেছে। কিন্তু আয়ারল্যান্ড সরকার তাদরেকে আদিবাসী স্বীকৃতি দেয়নি। সরকার তাদের বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী বলে মনে করে।
তবে যাযাবর জীবনযাপন করলেও তাদের জীববব্যবস্থা কিন্তু খুবই আকর্ষণীয়। তাদের ছেলেমেয়ের পোশাক-পরিচ্ছদ খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি খুবই মানসম্মত। তাদেরকে দেখলে মনে হয় না, তারা কোনো যাযাবর জাতি।
জেমি জনসনের কিছু ছবিতে দেখা যায়, কয়েকটি যাযাবর শিশু খেলনা সিগারেট নিয়ে খাওয়ার ভান করছে। তাদের শরীরে দামি দামি পোশাক। আবার কিছু শিশু তাদের পোষা প্রাণী নিয়ে খেলা করছে। ঘোড়া ও কুকুর তাদের পোষা প্রাণীর তালিকায় খুবই জনপ্রিয়।
আকর্ষণীয় পোশাকে দুই শিশু। ফটোগ্রাফার তাদের সুন্দর পায়েরই ছবি তুলেছেন
ক্যামেরার সামনে নানাভাবে পোজ দিয়েছে সম্প্রদায়টির শিশুরা। এখন এ সম্প্রদায়ের প্রায় ২৫ হাজার জনগণ বসবাস করেন
ক্যামেরার সামনে লাস্যময়ীভাবে পোজ দিয়েছে এক শিশু
বামে দুই ভাই ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়েছে। আর ডানের ছবিতে এক বাবা তার ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে পোজ দিয়েছেন
প্রতিবছর অক্টোবর মাসে কিছু অনুষ্ঠান পালন করে তারা। সে অনুষ্ঠানের মধ্যে একটি হলো ঘোড়া ও কুকুরকে হাটে তোলার উৎসব। প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানে তারা পোষা প্রাণীগুলোকে হাটে তোলে। আর এ ব্যবসা দিয়েই তাদের আয় রোজগার হয় এবং ইউরোপসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ হয়।
তাছাড়া তারা আরও একটি অনুষ্ঠান পালন করে, তা হলো ছেলেমেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হাটে তোলা। অনুষ্ঠানের দিন সম্প্রদায়টির মেয়েরা নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে হবু বরের খোঁজে হাটে উঠেন। মেয়েরা তাদের হবু বর বাছাই করেন আর ছেলেরা তার হবু স্ত্রী বাছাই করেন। অনুষ্ঠানে যেকোনো বয়সের নারী-পুরুষের বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার সুযোগও আছে।
জেমি জনসন বলেন, ‘তারা তাদের মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই সচেতন। তারা চান তাদের মেয়েরা যেন সুখি জীবনযাপন করতে পারে। তারা একটি বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে প্রত্যেক বাবারা তাদের মেয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্র খুঁজে বের করে তার সঙ্গে বিয়ে দেন।’
সম্প্রদায়টি আয়ারল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। তারা তাদের পোষা কুকুর, ঘোড়া ও অন্যান্য প্রাণী বিক্রি করে সংসার চালায়
ফটোগ্রাফার জনসনের ক্যামেরায় পোজ দিয়েছে দুই শিশু
কারাভ্যানে দুই সন্তানকে নেয় হাস্যজ্জ্বল এক মা। এভাবে কারাভ্যানে বসবাস করতেই তারা পছন্দ করেন
বামে ক্যারাভ্যানের পাশে ক্যামেরায় পোজ দিয়েছেন দুই ভাই। ডানে চুলে রঙিন ফিতা বেঁধে সেজেছে এক শিশু
জেমি জনসন কিছুদিন তাদের সঙ্গে বসবাস করে তাদের কাছে খুব আস্থা অর্জন করে। তাই শিশুরা তাকে ছাড়া থাকতেই চাইতো না। আর শিশুদের সঙ্গে মেশার সুযোগে শিশুদের হাসিমাখা মুখের কিছু ছবি তোলার সুযোগ হয়েছিল তার।
এই সম্প্রদায়টি তাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে চায়। তাই তারা শিশুদের তাদের দাদা-দাদির বা পূর্বপুরুষদের মজার মজার গল্প বলে উৎসাহিত করে যেন পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পূর্ব পুরুষদের স্মরণ করে জীবনব্যবস্থা চালিয়ে যায়।
একই রঙের কোট ও মাথার টুপি পরে নিজেকে ফিটফাট করেছে এক শিশু। এভাবে আকর্ষণীয় জীবনযাপন করে তারা
আয়ারল্যান্ডের বালিনাসলের শহরে এক শিশু ক্যামেরায় পোজ দিয়েছে। এখানে প্রতিবছর অক্টোবর মাসে হাজার হাজার যাযাবর বার্ষিক উৎসবে যোগ দেয়
জনসন বলেন, ‘পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে তাদের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে তারা তাদের পূর্বপুরুষদের গল্প শোনান।’