সুইসাইড বা আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। এটা একটা সমস্যা। জীবনের ব্যাথা আর মানসিক চাপগুলো যখন মানুষের সহ্যের বাইরে চলে যায় তখন এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এই সময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষটির মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করতে পারে না। আর তাই সে নিজেকে শেষ করে দেয়া মত ভয়াবহ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

কিন্ত, আত্মহত্যার দিকে ছুটে যাওইয়া মানুষ্কেও বাচানো সম্ভব। শুধু প্রয়োজন একটা সহযোগিতার হাত, একজন মানুষ যে তার অসহ্য যন্ত্রণাটাকে ভাগ করে নেবে। আত্মহত্যা অনেকটা রোগের মতই। আর পাচটা রোগের মত একজন আত্মহত্যা করার আগে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়।

আমেরিকার “সুইসাইড প্রিভেনশন এন্ড এওয়ারনেস অর্গানাইজেশন” এর তথ্যমতে প্রায় ৭০-৮০% ক্ষেত্রে একজন মানুষ আত্মহত্যা করার আগে কিছু লক্ষণ প্রকাশ করে। সঠিকভাবে এই লক্ষণগুলি চিহ্নিত করা গেলে তাকে বাচানো সম্ভব।

কিভাবে বুঝবেন একজন মানুষ আত্মহত্যার কথা ভাবছে-
১। অধিকাংশ সময় হতাশ বা দুঃখী থাকা।

২। কারণ বা কারণ ছাড়াই সবসময় মন খারাপ থাকা।

৩। অকারণে মেজাজ খারাপ থাকা। অকারণে মানুষের সাথে রাগারাগি, বা দুর্ব্যবহার করা।

৪। কথাবার্তায় বা লেখায় অপ্রাসঙ্গিকভাবে মৃত্যু বা আত্মহত্যার প্রসঙ্গ টেনে আনা।

৫। সবসময় নিজেকে একাকী মনে করা।

৬। কিছু ক্ষেত্রে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়া।

৭। আগে যে কাজ করতে ভাল লাগত, এখন সেগুলোকে বিরক্তিকর মনে হওয়া।

৮। অতিরিক্ত ঘুমানো কিংবা একেবারেই অল্প ঘুমানো।

৯। অতিরিক্ত খাওয়া দাওয়া শুরু করা কিংবা একেবারেই খাওয়ায় অনীহা।

১০। ব্যাক্তিত্বে বড় ধরণের পরিবর্তন।

১১। বন্ধু এবং পরিবার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া।

১২। অকারণে নিজেকে ছোট মনে করা।

আত্মহত্যা করার আগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের আচরণ থেকে বোঝা যায়। চেষ্টা করুন আপনার আশে পাশের কোন মানুষের মাঝে এই লক্ষণগুলি প্রকাশ পাচ্ছে কিনা।

কিভাবে একজনকে আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে আনবেনঃ যখন আপনি বুঝতে পারবেন কেউ একজন আত্মহত্যা করতে চলেছে, আপনার দায়িত্ব তাকে জীবনের পথে ফিরিয়ে আনা। এজন্য আপনার প্রথম কাজ তার সাথে কথা বলা। মনে রাখবেন, জোর করে কাউকে আত্মহত্যা করা থেকে বিরত রাখা সম্ভব না।

এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ মানসিক। আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এরকম একজন মানুষের সাথে কথা বলা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজগুলির একটি। যদি সন্দেহ হয় কেউ আত্মহত্যা করতে পারে, তাহলে দেরী না করে তার সাথে কথা বলুন।

প্রথমেই সারাসরি আত্মহত্যার প্রসঙ্গ তুলবেন না। প্রথমে জিজ্ঞেস করুন কেন তার মন খ্রাপ বা কিছুদিন যাবত তার আচরণের পরিবর্তনের কারণ কি। তাকে কথা বলার সুযোগ দিন। তার বলা কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনুন। এমন আচরণ করুন যেন তার কথা শোনাটা আপনার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

একজন মানুষ যখন আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় তখন সে নিজেকে গুরুত্বহীন ভাবতে শুরু করে আপনি যখন গুরুত্ব দিয়ে তার কথা শুনবেন তখন তার গুরুত্বহীন ভাবার চিন্তাটা দূরে সরে যাবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কথা বলতে বলতে সে হয়তো কাদতে শুরু করতে পারে। তাকে কাদতে দিন।

কান্না তার ভেতরের বিষন্নতাকে বাইরে বের করে দিবে। তাকে সহানুভূতি জানান। তার সমস্যাটা আপনি বুঝতে পেরেছেন এটা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। এসময় কখনোই তাকে দোষারোপ করবেন না, তার উপর রাগারাগি তো নয়ই।

এমনকি তার কাজটা যৌক্তিক কিনা এসব ব্যাপারেও কথা বলবেন না। এই সময়টা শুধু সহানুভূতি জানান আর আপনি যে তার পাশে আছেন এটা বুঝিয়ে বলুন। এরপর যত দ্রুত সম্ভব মনোবিদের কাছে নিয়ে যান। মনোবিদের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করবেন না। ঠান্ডা মাথায় তাকে বুঝিয়ে বলুন।

মনে রাখবেন, একজন আত্মহত্যার পথযাত্রীকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব শুধুমাত্র সহানুভূতি আর ভালোবাসার মাধ্যমেই।