১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, শনিবার

Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Search in posts
Search in pages
Filter by Categories
Uncategorized
ইসলামী জীবন
ঔষধ ও চিকিৎসা
খাদ্য ও পুষ্টি
জানুন
নারীর স্বাস্থ্য
পুরুষের স্বাস্থ্য
ভিডিও
ভেসজ
যৌন স্বাস্থ্য
রান্না বান্না
লাইফ স্টাইল
শিশুর স্বাস্থ্য
সাতকাহন
স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য
স্বাস্থ্য খবর

সেলফি থেকে সেক্সটিং

এই সময়ের এমন কোনো ছেলেমেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যে কিনা সেলফি’র সঙ্গে পরিচিত নয়। ক্যামেরা বা মোবাইল ফোনে নিজের ছবি নিজে তুলে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে আপলোড করা ছবিকেই সেলফি বলে। এই সেলফি’রই একটি বিকৃত রূপ হলো ‘সেক্সটিং’।টিনএজারদের ‘সেক্সটিং’ নিয়ে এখন ওত পেতে রয়েছে একটি চক্র। ‘‘সেক্স’ আর ‘টেস্কটিং’ এই দুটি শব্দ মিলে তৈরি এক উত্তেজক চ্যাটিংকেই বলে ‘সেক্সটিং’।

অনলাইন অপব্যবহারের নতুন উপসর্গ সেক্সটিং বিশ্বব্যাপী আতঙ্কে রূপ নিচ্ছে। দেশে দেশে বাড়ছে সেক্সটিংয়ের মাত্রা। অনেক উন্নত দেশে অর্ধেকের বেশি টিনএজার এখন সেক্সটিং এ আসক্ত। এ কারণে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কের প্রবণতা বাড়ছে। আর এটিই এখন ভাবিয়ে তুলেছে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশকেও। ভয় জাগাচ্ছে অভিভাবক ও সমাজবিদদের মনে।

সেক্সটিংয়ের মাধ্যমে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা নিজেদের ‘খোলামেলা’ ছবি বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড বা নিছকই বন্ধুদের শেয়ার করে। অথচ তারা জানতে পারছে না তাদের অজান্তেই দ্রুত গতিতে তারা পতিত হচ্ছে মহাবিপদে, কীভাবে মুহূর্তের মধ্যে তাদের সেই সব খোলামেলা ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে।

বিশ্বব্যাপী একটা চক্র টিনএজারদের এইসব ব্যক্তিগত খোলামেলা ছবি চুরির জন্য তৈরি করেছে শক্তিশালি অ্যাপ্লিকেশন। তারা সেক্সটিং থেকে ছবি চুরি করে তা ইন্টারনেটের মাধ্যমেই বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা মুনাফা লুটছে।

ইন্টারনেট ওয়াচ ফাউন্ডেশন (আইডব্লুউএফ) নামের একটি সংস্থা জানিয়েছে, যে টিনএজাররা ‘খোলামেলা’ ‘সেক্সি সেলফি’ পোস্ট করে তারা রীতিমত অপরাধ চক্রের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। এই চক্র ইন্টারনেট থেকে সেই সব ছবি যোগাড় করে পিডোফাইলসদের (শিশুদের প্রতি যৌন আসক্তি বোধ করে যারা) সরবারহ করে।

আইডব্লুউএফ সতর্ক করে জানিয়েছে, টিনেজাররা বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপস এর সিকিউরিটি প্রতিশ্রুতিতে মজে ‘সেক্সটিং’র ভয়াবহ দিকটির দিকে একেবারেই নজর দেয় না। যেমন স্ন্যাপচ্যাট দাবি করে- কোনও বন্ধুর সঙ্গে ছবি শেয়ার করার ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই সেই ছবি উধাও হয়ে যাবে। কিন্তু ওই ১০ সেকেন্ডেই খুব সহজে সেই ছবি ডাউনলোড করে নেওয়া যায়। এমনকি ফোনের স্ক্রিন এর ছবি তুলে ফেলা যায়। তারপর সেই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া তো আরও সহজ। মুহূর্তের মধ্যে হাজার হাজার শেয়ার হয়ে যায় সেই সব ছবি।

গবেষণায় দেখা গেছে, ৫২.৩ ভাগ তরুণ-তরুণী তাদের সঙ্গীদের কাছ থেকেই এ ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছে। গবেষণায় ৫৫ ভাগ নারী অংশগ্রহণকারী বলেন, তারা অতীতে সেক্সটিংয়ে জড়িত ছিলেন। অন্যদিকে ৪৮ ভাগ পুরুষ এতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

কম্পিউটার্স ইন হিউম্যান বিহ্যাভিয়ার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় জানা গেছে, অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের ম্যাসেজে অংশগ্রহণের কারণ সঙ্গীকে তোষামোদ, সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা, অংশগ্রহণ ও চাহিদা পূরণ, সঙ্গীর সঙ্গে অন্তরঙ্গতা প্রকাশ করা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কেয়ার এক্সিলেন্স (এনআইসিই) জানায়, সেক্সটিং দুশ্চিন্তার বিষয় এবং অবশ্যই তা নজরে থাকা উচিত। সংস্থাটি জানায়, সেক্সটিং কমবয়সীদের উপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে তা জানাই শুধু যথেষ্ট নয়। এ বিষয়ে সমাজকর্মী, চিকিৎসক ও শিক্ষকদের উচিত বয়স অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।

শুধু আমেরিকা-ইউরোপেই নয়, সেক্সটিং বেড়ে চলেছে বাংলাদেশেও। নানা ওয়েবসাইট বয়ে চলেছে তার নমুনাও। আমাদের দেশে বিশেষ করে উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারবারের শিশুরা আবেগপ্রবণ, অরক্ষিত, একাকী এবং মা-বাবার স্নেহহীনভাবে বেড়ে উঠছে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা কিশোর বয়সীদের মধ্যে সেক্সটিং বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। তাই সন্তানকে সেক্সটিং থেকে দূরে রাখতে এগিয়ে আসতে হবে অভিভাবকদের। তাদেরকে বোঝাতে হবে মোবাইল ফোন ব্যবহারের নিরাপদ দিকগুলো।

সেক্সটিং সম্পর্কে সতর্ক হওয়ার এখনই সময়। আপনার সন্তান কিংবা পরিবারের কোনো সদস্য এই সর্বনাশা আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে কিনা সে বিষয়ে চোখ রাখুন। সম্ভব হলে তার ম্যাসেজবক্স চেক করুন। দেখুন সে তার বন্ধুদের কাছে কি ধরনের ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে। আর তার কাছেইবা কী ধরণের ম্যাসেস আসছে। কম বয়সের তরুণ-তরুনীদের হাতে ইন্টারনেট যতটা সম্ভব না দেওয়াই ভাল। তার ডেস্কটপ ও ল্যাপটপে কিছু ওয়েবসাইট ব্লক করে রাখুন।

সর্বোপরি সন্তানের প্রতি আরও মনোযোগী হোন। তাদের কাছে একটু বেশি সময় থাকুন। গল্পে-খেলায় তাদের সঙ্গী হোন। ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিকতা বিকাশের বিষয়ে গুরুত্ব দিন।

Comments

comments