৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, শনিবার

Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Search in posts
Search in pages
Filter by Categories
Uncategorized
ইসলামী জীবন
ঔষধ ও চিকিৎসা
খাদ্য ও পুষ্টি
জানুন
নারীর স্বাস্থ্য
পুরুষের স্বাস্থ্য
ভিডিও
ভেসজ
যৌন স্বাস্থ্য
রান্না বান্না
লাইফ স্টাইল
শিশুর স্বাস্থ্য
সাতকাহন
স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য
স্বাস্থ্য খবর

শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য, সাপের বিষে নেশা

শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও কথাটা সত্যি। হ্যাঁ, সোনার চেয়েও সাপের বিষের দাম বেশি এখন বাজারে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও মাদকাসক্ত লোকের অভাব নেই। এদের মধ্যে কিছু লোকের মাদকাসক্তি এমন স্তরে পৌঁছেছে, যে কোকেন, হেরোইন, মারিজুয়ানা, আফিমেও নেশাটা ঠিক জমছে না।

তাদের আরও কড়া নেশা দরকার। তাই তাদের মাদকে এখন মেশানো হচ্ছে সাপের বিষ। ফলে সাপের বিষের চাহিদা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ফুলে ফেঁপে উঠছে ড্রাগ সিন্ডিকেটের অবৈধ ব্যবসা।

বলা বাহুল্য, সাপের বিষের ব্যবসা অসম্ভব লাভজনক। কোটি কোটি টাকার সাপের বিষ পাচার হচ্ছে দেশের বাইরেও। এ মুহূর্তে এক লিটার সাপের বিষের বাজার দাম প্রায় চার কোটি টাকা। ভারতে বিষ নিষ্কাশনের জন্য ধরা হয় প্রধানত চার প্রজাতির সাপ – গোখরো, রাসেল ভাইপার, পিট ভাইপার এবং শাখামুটে। বিষ নিষ্কাশনের পর সেই বিষ চালান করা হয় দেশে এবং বিদেশে। দেশে চোরা চালানকারীদের নারকটিক সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক ব্যাপক। সরকারি নজরদার এজেন্সিও নাকের ডগায়। কিন্তু তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না।

তবে একেবারে ধরাও যে পড়ছে না, তা নয়। বিষের চোরা চালানকারীরা প্রায়ই ধরা পড়ছে বন বিভাগের জালে। কিন্তু তাতে চোরা ব্যবসায় ইতরবিশেষ কিছু হয়নি। গত মাসে বন্যজীবন অপরধ দমন ব্যুরো এবং গুজরাটের বন বিভাগ আমির খান নামে একজন চোরা চালানকারীকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছে পাওয়া যায় ৮০ মিলি লিটার সাপের বিষ, যার বাজার দাম সাত-আট লাখ টাকা। বিহারের পুর্ণিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয় আরো দু’জনকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় এক বোতল সাপের বিষ। এতে ছিল ৯০০ গ্রাম গোখরো সাপের বিষ, যার বাজার দাম তিন কোটি টাকা। বোতলের গায়ে লেবেলে লেখা ছিল মেড ইন ফ্রান্স। জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে বিহারে ঢোকে সেই বিষ।

দিল্লিতে সম্প্রতি ধরা পড়ে সাপের বিষের আরো কিছু চোরা চালানকারী। উত্তর প্রদেশ রোডওয়েজের বাসে তারা যাচ্ছিল মিরাটের দিকে। গোপনসূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছে ছিল সফটড্রিঙ্কের বোতলে ৫০০ মিলি লিটার সাপের বিষ। শুধু তাই নয়, তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দু-দু’টো জ্যান্ত সাপও, যা রাখা ছিল থার্মোকলের বাক্সে। বিষের বোতল ও বাক্সটা যে ট্রাভেল ব্যাগে ছিল, তাতে ঝুলছিল বিমান সংস্থার ট্যাগ। অর্থাৎ সেসব এসেছিল দেশের বাইরে থেকে। মিরাট হয়ে সম্ভবত তা যাচ্ছিল নেপালে।

তবে শুধু নেপাল নয়, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে এ সব চালান হয়ে থাকে ইউরোপীয় দেশগুলিতেও, বলেন ‘পিপলস ফর অ্যানিমেলস’ নামে এক এনজিওর কর্মকর্তা সৌরভ গুপ্ত। সাপের বিষ দিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলি তৈরি করে অ্যান্টি-ভেনাম সিরাম। এটা সাপে কাটা মানুষের জীবনদায়ী ওষুধ। তাই সাপের বিষের এই অবৈধ ব্যবসার ফলে ওষুধ কোম্পানিগুলি পড়েছে নানা ধরনের সমস্যার মুখে। সাতপুরা ফাউন্ডেশনের এক পরিবেশবিদ বলেন, অ্যান্টি-ভেনাম ওষুধ তৈরি চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ফারাক বাড়ছে। একমাত্র সরকারি হফকিন ইনস্টিটিউটই সাপের বিষ নিষ্কাশনের বৈধ সংস্থা। তাই এই পরিবেশবিদের মতে, এই ধরনের আরো বৈধ সংস্থা থাকা দরকার।

ওষুধের পাশাপাশি গবেষণার কাজেও ব্যবহার করা হয় সাপের বিষ, বলেন ভারতের বন্য জীবন মনিটারিং নেটওয়ার্ক সংক্ষেপে ট্রাফিক ইন্ডিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় শাখার অধিকর্তা। এই চার প্রজাতির সাপ ধরার পর দু-তিনবার বিষ বের করে আবার সাপগুলো জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। বছর দুই আগে মহারাষ্ট্র সরকার সাপের বিষের ব্যবসাকে বৈধ করতে চেয়েছিল। অবৈধ সাপুড়েদের সাপ ধরার অনুমতি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। বিষধর সাপ হামেশাই বসত অঞ্চলে ঢুকে পড়ে। তাই ভাবা হয়েছিল, সেইসব সাপ ধরে সাপুড়েরা বিষ বের করে বনে জঙ্গলে ছেড়ে দেবে। ঠিক হয়েছিল, বছরে আট হাজারের বেশি সাপের বিষ বের করা যাবে না। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে খাপ্পা হন পরিবেশবিদরা। তাদের আশংকা, এতে সাপের বিষের চোরাচালান বাড়বে বই কমবে না। তাছাড়া সাপের বিষ ছাড়াও বাড়বে সাপের চামড়া ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চোরা ব্যবসা।

কীভাবে মাদকে মেশানো হয় সাপের বিষ? সাপের বিষ নিষ্কাশনের পর প্রথমে তা রাখা হয় খুব কম তাপমাত্রার আধারে। কিছুদিন পর তরল বিষ শুকিয়ে দানা বেঁধে গেলে তা গুঁড়ো করা হয়। তারপর তা মেশানো হয় মদ বা অন্যসব মাদকে। সাধারণত ১০০ লিটার মদে ১০ গ্রাম সাপের বিষের গুঁড়ো মেশানো হয়।

Comments

comments