ম্যাজিক মাশরুম খুব দ্রুত মনকে উদার হতে সাহায্য করে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। বেশ কিছু গবেষণায় এমনকি সাম্প্রতিক দুটি প্রতিশ্রুতিশীল ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে, মাশরুমে চেতনার উপর প্রভাব সৃষ্টিকারী উপাদান সিলোসাইবিন থাকে যা উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্ণতার উপশম করতে পারে।

মাশরুম আপানার শরীর ও মনে কী ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে তার বিষয়ে জেনে নিই চলুন।

১। মাশরুম আপনাকে ভালো থাকার অনুভূতি দিতে পারে: ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অন ড্রাগ অ্যাবিউজ এর মতে, ম্যাজিক মাশরুম কম মাত্রার মারিজুয়ানার প্রভাবের মতোই মনকে হালকা হওয়ার অনুভূতি দেয়। অন্য হেলুসিনোজেনিক ঔষধ যেমন- LSD অথবা Peyote এর মতোই মাশরুম তাদের প্রভাব তৈরি করে মস্তিষ্কের নিউরাল হাইওয়ের উপর নিউরোট্রান্সমিটার সেরেটোনিন ব্যবহারের মাধ্যমে। আরো নির্দিষ্টভাবে বলা যায় যে, ম্যাজিক মাশরুম মস্তিষ্কের সম্মুখভাগের বহিরাবরণ (প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স) এর উপর প্রভাব বিস্তার করে। মস্তিষ্কের এই অংশটি অবাস্তব চিন্তা ও চিন্তার বিশ্লেষণকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং মেজাজ ও উপলব্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২। তারা আপনাকে অলীক কিছুতে বিশ্বাস করতে উদ্বুদ্ধ করে: অনেক ব্যবহারকারীই বিষয়টি এমনভাবে বর্ণনা করেছেন যে তারা শব্দ দেখেছেন এবং বর্ণ শুনেছেন। ২০১৪ সালে এই ঔষধের বৈশিষ্ট্য নিয়ে করা প্রথম গবেষণায় দেখা যায় যে, সিলোসাইবিন মস্তিষ্কের  নেটওয়ার্কের উপর প্রভাব ফেলে। ২ মিলিগ্রাম ঔষধ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেয়া হয় যাদের তাদের মধ্যে গবেষকেরা দেখেন যে, মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন ও শক্তিশালী সক্রিয়তা দেখা যায় যা সাধারণত বিরল।

৩। বিষণ্ণতাকে সহজ করতে সাহায্য করে: লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের নিউরোসায়েন্টিস্ট ডেভিড নাট যিনি ২০১২ সালে সিলোসাইবিন নিয়ে গবেষণা করেন, তিনি দেখেন যে, যাদেরকে এই ঔষধ দেয়া হয় তাদের মস্তিষ্কের কাজের ধরণের পরিবর্তন হয়। যেখানে মস্তিষ্কের কিছু এলাকা অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠে আর কিছু অস্পষ্ট থেকে যায় – মস্তিষ্কের এমন একটি অঞ্চলসহ যা নিজের ইন্দ্রিয়কে পরিচালিত করার ভূমিকা পালন করে। নাট বিশ্বাস করেন যে, বিষণ্ণতাগ্রস্ত মানুষের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের অনুভূতির অঞ্চলে সার্কিটগুলোর মধ্যে যোগাযোগ অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। নাট সাইকোলজি টুডেকে বলেন, যাদের চিন্তাভাবনা বিষণ্ণতাগ্রস্থ তাদের মস্তিষ্ক ওভারকানেক্টেড থাকে। কিন্তু এই সংযোগগুলোকে বিচ্ছিন্ন করা গেলে এবং নতুন সংযোগ তৈরি হলে চিন্তা দূর হয় এবং এর থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।

৪। মানসিক অসুস্থতার ক্ষেত্রে শল্য চিকিৎসার মতোই কাজ করে: দুটি নিয়ন্ত্রিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়েলে গবেষকেরা জীবনের সমাপ্তির সম্মুখীন বিষণ্ণতা ও মর্মপীড়ায় ভোগা মানুষদের উপর সিলোসাইবনের প্রভাব লক্ষ্য করেন। এতে পরামর্শ দেয়া হয় যে, এই ঔষধের একটি মাত্র ডোজই হতে পারে বিষণ্ণতা ও উদ্বিগ্নতা উপশমের শক্তিশালী অস্ত্র।

প্রথম গবেষণাটি করেন জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা, আর দ্বিতীয়টি করেন নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা।

ছয় মাস পরে দেখা যায় যে, জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশেরই বিষণ্ণতা ও উদ্বিগ্নতার উপসর্গ তাৎপর্যপূর্ণভাবেই কমতে দেখা যায়, একে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড মানসিক মূল্যায়ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলেন যে, সাড়ে ছয় মাসের সাইকেডেলিক ট্রিপের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের ৬০-৮০ শতাংশেরই উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্ণতা কমে।

৫। দুশ্চিন্তা মুক্ত হতে সাহায্য করে: নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় তীব্র দুশ্চিন্তায় ভুগছেন এমন ক্যান্সার রোগীদের উপর এই ঔষধ কীভাবে কাজ করে তা দেখেন। গবেষকেরা সিলোসাইবিনের প্রভাব লক্ষ্য করেন স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে যাদের সিলসাইবিনের একটি ডোজ দেয়া হয়েছিলো ট্যাবলেট আকারে অথবা প্লাসিবো দেয়া হয়েছিল যাদের।

৭। আপনার চোখের পিউপিল বড় হয়ে যায়: মাশরুম ব্যবহারের ফলে সেরেটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যার ফলে পিউপিল বড় হয়ে যেতে পারে।

৮। সময়ের অনুভূতি নষ্ট হয়ে যায়: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন ড্রাগ অ্যাবিউজ এর মতে, শ্রুমস ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে সময় ধীর গতির হয়ে গেছে এমন অনুভূতি হতে পারে।

৯। অনেক বেশি উন্মুক্ত ও কল্পনাপ্রবণ অনুভব করতে পারেন: জনস হপকিন্স এর মনোবিজ্ঞানীরা স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবকদের একটি ছোট দলকে সিলোসাইবিনের ডোজ দেন শারীরিক অভিজ্ঞতার বাইরের প্রবৃত্তি পর্যবেক্ষণের জন্য। অংশগ্রহণকারীরা বলেন যে, তারা অনেক বেশি উন্মুক্ত, অনেকবেশি কল্পনাপ্রবণ এবং সৌন্দর্য এর জন্য অনেক বেশি কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন।

গবেষকেরা এই স্বেচ্ছাসেবকদের এক বছর পরে লক্ষ্য করেন, এদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই বলেন যে, এই অভিজ্ঞতা তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার একটি।