১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, শনিবার

Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Search in posts
Search in pages
Filter by Categories
Uncategorized
ইসলামী জীবন
ঔষধ ও চিকিৎসা
খাদ্য ও পুষ্টি
জানুন
নারীর স্বাস্থ্য
পুরুষের স্বাস্থ্য
ভিডিও
ভেসজ
যৌন স্বাস্থ্য
রান্না বান্না
লাইফ স্টাইল
শিশুর স্বাস্থ্য
সাতকাহন
স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য
স্বাস্থ্য খবর

বর্তামান পরিস্থিতে সামাজিক ন্যায়-বিচারে রাসূলুল্লাহ (স.) -এর শিক্ষা !!!

বর্তমান পৃথিবীতে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’-এর মূল লক্ষ্য হলো প্রত্যেককে তার হক বা প্রাপ্য অংশ পরিপূর্ণভাবে দিয়ে দেয়া।
এ ক্ষেত্রে ধনী-গরিব, উচু-নিচু, সাদা-কালো আরব-অনারব, সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু, দল-মত নির্বিশেষে কেউ কোন রকম অন্যায়-অবিচার ও জুলুম-নির্যাতনের স্বীকার হবে না।
পৃথিবীতে নবী ও রাসূলগণের প্রধান কাজ ছিল আল্লাহর বিধানের আলোকে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক এক শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক রাসূলুল্লাহ (স.) সামাজিক ন্যায়বিচারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। আধুনিক বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আমাদের অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (স.)-এর সামাজিক ন্যায়বিচারের দিকে লক্ষ্য করতে হবে এবং এর থেকে শিক্ষা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ ধারণার সামগ্রীক রূপ। আর ইসলামে এটিকে আরো ব্যাপক পরিসরে ব্যাখ্যা করা হয়। এর মধ্যে তাওহীদ, সৃষ্টিজগৎ এবং মানুষের সার্বিক জীবন সম্পৃক্ত। কারণ ইসলাম একটি অবিভাজ্য পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শন। এর প্রত্যেকটি শাখা-প্রশাখা একটির সাথে অপরটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ¯্রষ্টা, সৃষ্টিজগৎ, মানুষ, ব্যক্তি, সমষ্টি, রাষ্ট্র-সব কিছুই সামাজিক ন্যায়বিচারের অন্তর্ভুক্ত। সকলের পারস্পরিক সম্পর্কে যখন ন্যায়বিচারের ঘাটতি হয় তখন সৃষ্টিজগৎ অশান্তি ও নৈরাজ্যে ভরে যায়। পৃথিবীতে সবচেয়ে শান্তিময় সমাজ ছিল নবী-রাসূলগণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সমাজ। আর তাঁদের প্রতিষ্ঠিত সমাজের প্রধান ভিত্তিই ছিল প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায় ও ইনসাফ কায়েম করা। এটা তাদের দায়িত্ব ছিল। আর এ দায়িত্ব নির্ধারণ করেছিলেন স্বয়ং আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন’।
আল্লাহ তা’য়ালা আল-কুরআনের বহু স্থানে নবী ও রাসূলগণকে সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, আমি আমার রাসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলিসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের ওপর কিতাব ও মানদ- নাযিল করেছি, যাতে মানবজাতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করে। আমি লোহাও নাযিল করেছি, যার মধ্যে প্রচুর শক্তি ও মানুষের অনেক কল্যাণ আছে, এ জন্য যে, আল্লাহ জানতে চান, কে না দেখেও তাকে ও তাঁর রাসূলদের সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।
‘সামাজিক ন্যয়বিচার’ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন-নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সংকাজ ও আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং অশ্লীলতা, অসৎকাজ ও অবাধ্যতা নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে সুপদেশ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। এছাড়া যারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে না তাদেরকে আল-কুরআন কাফির যালিম ও ফাসিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রের ওপর অন্যায় হস্তক্ষেপ করছে। তাদের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধ্য করছে। সহজে তা মেনে না নিলে শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এমনকি কখনো কখনো অন্যায়ভাবে তাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। মিথ্যা অজুহাতে গোটা দেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মুসলিমদের ও মুসলিম দেশগুলোর অবস্থা আরো ভয়ানক। সারা পৃথিবীতে আজ তারা নানা জুলুম-নির্যাতনের স্বীকার। অশান্তি ও বিশৃঙ্খলায় তারা জর্জরিত। ইসলামবিদ্বেষী সম্প্রদায় মুসলিম ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ওপর নানামূখী নির্যাতন চালাচ্ছে। কোথাও তারা সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে, কোথাও আবার পরোক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে। কোথাও আবার প্ররোচনা দিয়ে মুসলিমদের বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত করছে। এর মধ্যে কোন এক দলকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে অন্য দলের ওপর লেলিয়ে দিচ্ছে। অবশ্য মুসলিম সম্প্রদায়ও এক্ষেত্রে কম দোষী নয়।
তারা আজ ইসলামের শিক্ষা থেকে বহু দূরে অবস্থান করছে। সঠিক ইসলাম থেকে তারা বিচ্যুত। তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি, হানাহানিতে লিপ্ত। একজন ব্যক্তিকে শাস্তি দিয়ে গিয়ে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা হরা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে বহু জনপদ। বন্দী করা হয়েছে বহু মানুষকে। শুধু বন্দী করেই ক্ষান্ত দেয়া হয়নি। বন্দীদের উপর চালানো হয়েছে অমানবিক নির্যাতন। গুয়ানতানামো কারাগারের কথা আমরা জানি। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারাগার, যা বন্দীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত। এই কারাগারে বন্দীদের বিনাবিচারে আটক রাখা হয় এবং তথ্য আদায়ের লক্ষ্যে ওয়াটার বোর্ডিংসহ বিবিধ আইন বহির্ভূত উপায়ে নির্যাতন চালানো হয়।
রাসূলুল্লাহ স.-এর রিসালাতের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল সমাজের সকল স্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহর বিধানের ভিত্তিতে প্রত্যেককে তার পরিপূর্ণ হক দিয়ে দেয়া। আল্লাহ তা’য়ালা রাসূল (স.)-কে অধিক গুরুত্বসহকারে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দিয়েছেন। সমাজের এই অশান্তিময় অবস্থা রাসূলুল্লাহ (স.)-কে সারাক্ষণ কষ্ট দিতো। তিনি সব সময় চিন্তা করতেন কিভাবে সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যায়। এ কারণে আমরা দেখতে পাই নুবুওয়াতের আগেই যুবক মুহাম্মদ (স.) সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুবকদের নিয়ে ‘হিলফুল ফুযুল’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।
এর নামকরণের ব্যাপারে বলা হয়েছে-কেননা তাঁরা এই মর্মে অঙ্গীকার করেছিলেন যে, তাঁরা নিজেদের মধ্যে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করবে। তাঁদের কোন ক্ষমতাবান ব্যক্তি কোন দুর্বল ব্যক্তির ওপর জুলুম করলে তা প্রতিহত করা হবে এবং কোন স্থানীয় লোক কোন বিদেশী অভ্যাগতের হক ছিনিয়ে নিলে তা ফিরিয়ে দেয় হবে।
দাওয়াতী জীবনের প্রথম দিকে একবার রাসূলুল্লাহ (স.) বানূ হাশিম গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে একটি বৈঠক আহ্বান করেন। সেখানে তিনি তাঁর দাওয়াতের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন যে “আমি তোমাদের নিকট এমন দাওয়াত নিয়ে এসেছি, যে দাওয়াত দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিত করবে।”
অর্থাৎ এর মাধ্যমে দুনিয়ার এমন এক সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে যেখানে কোন অকল্যাণ ও অশান্তি থাকবে না। আর এ দাওয়াত কবুল করলে আখিরাতেও সফল হওয়া যাবে। এর কিছুদিন পর তিনি কুরাইশ প্রতিনিধি দলের সাথে আলোচনা করার সময় বলেন, “আমি যে দাওয়াত পেশ করছি তা যদি তোমরা গ্রহণ করো, তাহলে তাতে তোমাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের কল্যাণ নিহিত আছে।

Comments

comments