এলার্জি থেকে মুক্তির সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ হচ্ছে নিমপাতা !!!
এলার্জি লাখ লাখ মানুষের কাছে এক অসহনীয় ব্যাধি, এলার্জি হাঁচি থেকে শুরু করে খাদ্য ও ঔসুধের ভীষণ প্রতিক্রিয়া কিংবা শ্বাসকষ্ট হতে পারে, কারো ক্ষেত্রে এলার্জি সামান্য তম অসুবিধা করে, আবার কারো ক্ষেত্রে জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।
ঘরের ধুলা-বালি পরিষ্কার করছেন? হঠাৎ করে হাঁচি এবং পরে শ্বাসকষ্ট অথবা ফুলের গন্ধ নিচ্ছেন বা গরুর মাংস, চিংড়ি, ইলিশ কিংবা গরুর দুধ খেলে শুরু হলো গা চুলকানি বা চামড়ায় লাল লাল চাকা হয়ে ফুলে ওঠা। এগুলি হলে আপনার এলার্জি আছে ধরে নিতে হবে।চলুন জেনে নেই এলার্জি থেকে মুক্তির উপায়-
১. বিছানা ও আসবাবপত্রে অ্যালার্জি
বিছানার চাদর, বালিশের কভার, বালিশ, লেপ, তোষক, মেট্রেস, কম্বল, মশারিতে প্রতিদিন আক্রমণ করে ধুলোবালি, জীবাণু ও ঘরোয়া জীবাণু মাইট ডাস্ট। ডাস্ট মাইটগুলো মাকড়সা জাতীয় ক্ষুদ্র কীট। লম্বায় এই কিটগুলো এক মিলিমিটারের তিন ভাগের এক ভাগেরও কম।
আমাদের শরীরের ত্বক থেকে প্রতিনিয়ত ঝরে যাওয়া অসংখ্য মৃত কোষ খেয়ে বেঁচে থাকে এই জীবাণু। এরা প্রতিনিয়ত প্রচুর বিষ্ঠা ত্যাগ করে। ঘরদোর, বিছানা যখন ঝাট দেয়া হয় তখন এই বিষ্ঠাগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। ডাস্ট মাইটের বিষ্ঠাই আমাদের অনেকের শরীরে অ্যালার্জি আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ।
* টিপস
বিছানার ডাস্ট মাইট থেকে পরিত্রাণ পেতে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, লেপের কভার, মশারি ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এছাড়া ঘরের চারপাশে ঝাট দিয়ে মেঝে পানি ও ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করলে অ্যালার্জেন থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। তাছাড়া প্রতিদিন উঠোনে বা বেলকনিতে আসা রোদে লেপ, কম্পল, কাঁথা, তোষক মেট্রেস শুকিয়ে নেয়া উচিত। রোদের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মিতে হাউজ ডাস্ট মাইট মরে যায়।
বাসাবাড়িতে চেয়ার, টেবিল, সোফা, খাট, আলমারি, ওয়ারড্রোব, কাঠের বিভিন্ন আসবাবপত্রের ফাঁকে ফাঁকে ধুলোবালি ও ডাস্ট মাইট থাকে। অ্যালার্জি থেকে বাঁচতে প্রতিদিন এইসব আসবাবপত্র ঝাড়া-মোছা করা প্রয়োজন।
২. বই পুস্তক
সবাই বাসায় অনেক যত করে সেলফে প্রিয় লেখকের বই সাজিয়ে রাখে। এই কারণে প্রতিদিন ঘর পরিষ্কার করার সময় কিছু ময়লা বইয়ের সেলফে জমে থাকে এবং জমে থাকা ময়লা সৃষ্টি করে অ্যালার্জেন। এই থেকে রেহাই পেতে এক-দু দিন পর পর বইগুলো নাড়াচাড়া করা প্রয়োজন। এই নাড়াচাড়ার কারণে সেলফে থাকা ডাস্ট চলে যাবে।
কার্পেট, ম্যাট ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে এবং শীতের সময় ঘর উষ্ণ রাখতে মেঝেতে নামীদামী কার্পেট ও ম্যাট বিছিয়ে রাখেন অনেকে। কিন্তু এই কার্পেট ও ম্যাটে প্রতিদিন প্রচুর ধুলাবালি ও ময়লা জমে। এই ময়লা থেকে জন্ম নেয়া ডাস্ট মাইট বিশেষ করে শিশুরা ম্যাটে ও কার্পেটে বসে থাকে, খেলাধুলা করে, যে কারণে তারা অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয় এবং বাঁধিয়ে ফেলে নানান অসুখ।
* টিপস
কার্পেট ও ম্যাট থেকে ডাস্ট মাইট দূর করতে হলে প্রায় প্রতিদিনই ভ্যাকুয়াস ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করা দরকার। যদি ভ্যাকুয়াস ক্লিনার হাতের কাছে না থাকে তাহলে ছাদে নিয়ে ম্যাট ও কার্পেট ঝাট দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। পরিষ্কার করা ম্যাট ও কার্পেট মেঝেতে বিছানোর আগে মেঝে ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নিন।
৩. দরজা, জানালা ও পর্দা
বাসাবাড়িতে দরজা, জানালায় প্রতিদিন প্রচুর ময়লা জমে। এই ময়লার মধ্যে থাকে মাকড়সার জাল, মরা পোকামাকড় ও ডাস্ট মাইট। সেইসাথে দরজা, জানালার পর্দার ভাঁজে ভাঁজে জমা হতে থাকে ডাস্ট মাইট। পর্দা নাড়াচাড়া করার পরই এই মাইট নাকে-মুখে প্রবেশ করে মানুষের মধ্যে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে।
* টিপস
প্রায় প্রতিদিনই দরজা, জানালা পরিষ্কার করা প্রয়োজন। এক সপ্তাহ পর পর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নেয়া দরকার। সেইসঙ্গে মোটাকাপড়ে তৈরি পর্দা মাঝে মধ্যে ধুয়ে নেয়া দরকার এবং প্রতিদিন ঝেড়ে নেয়া প্রয়োজন। তাহলে অনাহুত অ্যালার্জি থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যাবে।
৪. রান্নাঘরে
রান্নাঘর এমনিতে স্যাঁতস্যাতে হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে মাছ, মাংস, তরকারি, পেঁয়াজ, মরিচসহ রান্নার নানা উপকরণের ময়লা রান্না ঘরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। রাতের অন্ধকারে সেই ময়লায় হানা দেয় পোকামাকড় ও ইঁদুর। এই অবস্থায় রান্না ঘরে তৈরি হয় ছত্রাক ও ডাস্ট মাইট। তাছাড়া ময়লা-আবর্জনায় পুরো রান্না ঘরে হয়ে যায় দুর্গন্ধময়।
* টিপস
রান্না ঘরের এই ময়লা-আবর্জনা থেকে মুক্ত হতে প্রয়োজন প্রতিদিন পরিষ্কার করা। ফ্লোর ক্লিনার ও গরম পানি দিয়ে রান্না ঘর পরিষ্কার করা প্রয়োজন। তাছাড়া রান্না ঘরে রাখা বিভিন্ন মসলার কৌটা, হাঁড়ি-পাতিল, জার ও গ্যাস চুলা প্রতিদিন পরিষ্কার করা প্রয়োজন। তা না হলে ধুলাবালি, ছত্রাক ও মাইট ডাস্ট প্রচুর অ্যালার্জি সৃষ্টি করবে।
৫. গোসলখানায়
গোসলখানায় সবসময় পানি পড়ে স্যাঁতস্যাতে ও ভেজা অবস্থায় থাকে। তাছাড়া বাথটাব ও প্যানে পানি পড়ে ভিজে শ্যাওলা পড়ে লালচে হয়ে যায়। এই অবস্থায় সেখানে ছত্রাক জন্ম নেয় সৃষ্টি করে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু। তাছাড়া মেঝে পিচ্ছিল হয়ে যায়। গোসলখানায় অস্বাস্থ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়, চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এ থেকেও গোসলখানা ও বাথরুম ব্যবহারকারীদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে নানা ধরনের অ্যালার্জি।
* টিপস
গোসলখানা ব্যবহার করার পর পানির কল ভালোভাবে বন্ধ করতে হবে। জানালা খোলা রাখতে হবে যাতে করে আলো-বাতাস প্রবেশ করে। গোসলখানা যাতে শুকনো থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিদিন একবার গোসলখানার মেঝে ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করা প্রয়োজন। বাথটাব ও প্যান প্রতিদিন ব্যবহার করার ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করা দরকার।
৬. পোষা প্রাণী থেকে
অনেকেই বাসাবাড়িতে বিড়াল, কুকুর, ভেড়া, ছাগল, ময়না, টিয়া, ঘুঘুসহ নানান জাতীয় পশুপাখি পুষে থাকেন। অনেকেই হয়তো জানেন না অতিপ্রিয় পোষা এই প্রাণীদের শরীরে প্রতিদিন প্রচুর ডাস্ট মাইট জন্মে এবং তাদের শরীরের লোম থেকে অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়। তাছাড়া পশুপাখির মলমূত্র ও লালা থেকেও সৃষ্টি হয় অ্যালার্জি।
* টিপস
পশুপাখিদের প্রতিদিন না হলেও দু-একদিন পর পরই গোসল করিয়ে দেয়া প্রয়োজন। গোসলে যদি সাবান ব্যবহার করা যায় তাহলে অনেক ভালো হয়। পশুপাখি যখন মলমূত্র ত্যাগ করে তখন তা যেন পাত্রে করে, এই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পশুপাখি যে জায়গায় থাকে সেই জায়গাটা প্রতিদিন পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন।
খাওয়ার পর উচ্ছিষ্ট খাবারগুলো ফেলে দেয়া প্রয়োজন। এক মাস অন্তর অন্তর পশু-পাখিদের ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। সবচেয়ে ভালো সকালবেলা পশুপাখিকে গোসল করানো এবং থাকার জায়গাটা পরিষ্কার করা। তাহলে অ্যালার্জি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এছাড়া শিশুদের খেলনা, জুতা, ফ্যান, এসি, ঝাড়বাতি ও বিভিন্ন শোপিসে ধুলোবালি জমে জন্ম নেয় অ্যালার্জি। এসব শখের জিনিস ভালোভাবে একদিন পর পর পরিষ্কার করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
চলমান জীবনে এলার্জি কতটা ভয়ংকর সেটা যিনি ভুক্তভোগী শুধু তিনিই জানেন। এর উপশমের জন্য কতজন কত কিছুই না করেন। তবুও এর সুরাহা হয় না। কত সুস্বাদু খাবার চোখের সামনে দেখে জিহ্বাতে পানি আসলেও এলার্জি ভয়ে তা আর খাওয়া হয় না। এজন্য বছরের পর বছর ভুক্তভোগীরা এসব খাবার খাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকেন।
ভোগেন পুষ্টিহীনতায়। তবে এর জন্য আর চিন্তা নয়। এলার্জি আক্রান্ত ব্যক্তিরা সব চিন্তা মাথা থেকে ছেড়ে ফেলুন। এবার বিনা পয়সায় এলার্জিকে গুডবাই জানান আজীবনের জন্য।
এজন্য আপনাকে যা করতে হবে–
– এক কেজি নিম পাতা ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন।
– শুকনো নিম পাতা পাটায় পিষে গুড়ো করুন এবং তা ভালো করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন একটি কৌটায় ভরে রাখুন।
– এবার ইসব গুলের ভুষি কিনুন। এক চা চামচের তিন ভাগের এক ভাগ নিম পাতার গুড়া এবং এক চা চামচ ভুষি ১ গ্লাস পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন।
– আধা ঘণ্টা পর চামচ দিয়ে ভালো করে নাড়ুন।
– প্রতিদিন সকালে খালি পেটে, দুপুরে ভরা পেটে এবং রাতে শোয়ার আগে খেয়ে ফেলুন। ২১ দিন একটানা খেতে হবে।
– কার্যকারিতা শুরু হতে এক মাস লেগে যেতে পারে। আরোগ্য লাভ করবেন। এরপর থেকে এলার্জির জন্য যা যা খেতে পারতেন না যেমন- হাঁসের ডিম, বেগুন, গরুর মাংস, চিংড়ি, কচু, কচুশাক, গাভীর দুধ, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য খাবার খান। দেখবেন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
Related Posts
Comments
comments