রমজানে স্বাস্থ্য সমস্যা এবং সমাধান !!!
সারাদিন রোযা পালনের পর অনেক স্বাভাবিক ব্যক্তির শরীরেও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে এ ধরনের সমস্যা হওয়ার কারণে রোযা পালন থেকে বিরত থাকেন। তবে ডাক্তারী মতে নিয়ম মেনে রোযা পালন করলে তা শরীরের জন্য উপকারী।
হার্টবার্ন
হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা অনেকের কাছেই পরিচিত একটি রোগ। খাবার হজম করার জন্য পাকস্থলীতে সব সময় এসিড থাকে। খাদ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়াও এই এসিডের প্রভাবে মারা যায়। কোনো কারণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত এসিড তৈরি হলে বা পাকস্থলীতে খাবার না থাকার সময় এই এসিড নি:সরণ হলে অথবা পাকস্থলী থেকে এসিড ইসোভেগাসে (খাদ্যনালীর) অংশে চলে এলে বুক জ্বলে। রোযার সময় এই হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা সমস্যাটি অনেকের হয়।
এ ধরনের সমস্যা নিরাময়ের জন্য বাজারে বিভিন্ন ওষুধ রয়েছে। যেমন – এন্টাসিড, রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল। সেহরি খাওয়ার সময় এ জাতীয় ওষুধ খেলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে ওষুধ খেয়ে এ সমস্যা দূর করার চেয়ে খাদ্যাভাসে কিছুটা পরিবর্তন আনাই ভালো। যেমন – তৈলাক্ত খাবার, ভাজাপোড়া, বাসি ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করা। ধূমপানের কারণেও এই সমস্যাটি হয়। তাই এই সময়টা ধূমপান থেকে বিরত থাকতে পারলে নিজের জন্যই ভালো। কারও কারও আবার টক ঢেকুর আসে, বুক জ্বলে। তারা শোয়ার সময় একটু উঁচু বালিশ ব্যবহার দিলে অনেকটা উপকার পাবেন। যাদের আগেই হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা সমস্যাটি আছে তারা এন্টাসিড, রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল ইত্যাদি ওষুধ একটু বেশি মাত্রায় খেতে পারেন। সেহরির পাশাপাশি ইফতারের পরপর এ ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
মাথাব্যথা
মাথাব্যথা হয়নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে। যেমন – পানিশূন্যতা, ক্ষুধা, ঘুম ও রেস্ট কম হওয়া, চা, কফি পান না করা। রোযায় এ ধরনের কারণ বেশি ঘটে থাকে। তাই এ সময় অনেকেই এ সমস্যায় ভোগেন। এ সমস্যা থেকে দূরে থাকার জন্য প্রতিদিন ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পানি ও জুসজাতীয় তরল খাবার বেশি বেশি খেতে পারেন। মাথাব্যথার সমস্যা যাদের নিয়মিত হয় তারা সেহরিতে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শমতো রোজা রাখবেন।
কনস্টিপেশন
কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যাটি অন্যান্য সময়ের চেয়ে রোযায় বেশি দেখা যায়। পানিশূন্যতা ও আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়ার ফলে এ সমস্যাটি দেখা দেয়। শাকসবজি, ফলমূল, ইসুবগুলের ভূষি, আল আঁটা ও ঢেঁকিছাটা চাল এই সমস্যা প্রতিরোধ করে থাকে। এরপরও সমস্যা থাকলে ল্যাক্সেটিভ ওষুধ খেতে পারেন।
বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা
অনেকের মতে রোযা রাখার ফলে মায়ের বুকের দুধের পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে সন্তান দুধ থেকে বঞ্চিত হয় ভেবে অনেক মা রোযা পালন থেকে বিরত থাকেন। তবে ডাক্তারী মতে এ ধরনের কোনো কথার মোটেও ভিত্তি নেই। তবে রোযা পালনকারী মাকে অবশ্যই সেহরি ও ইফতারে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে এবং শোয়ার আগ আগ পর্যন্ত ঘণ্টায় ঘণ্টায় অল্প অল্প করে পানি খেতে হবে।
অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট
রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের ক্ষেত্রে ডাক্তারদের পরামর্শ এরকম – সেহরি ও ইফতারের সময় ইনহেলার নিতে হবে। আর হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট হলে দেরি না করে রোগীকে হাসপাতালে নিন।
চোখের ছানি
রোজায় চোখের রোগীরা যে সমস্যায় পড়েন সেটি হলো রোজা রাখা অবস্থায় ড্রাগ ব্যবহার করতে পারবেন কি না। এর কারণ চোখে ড্রপ দিলে তা মুখে চলে যেতে পারে, যা রোজার জন্য ক্ষতিকর। ডাক্তারী মতে, চোখের সঙ্গে নাকের যোগাযোগকারী একটি নালি আছে। কেউ কাঁদলে চোখের পানি তাই নাকে চলে আসে। তাই চোখে ড্রপ নেয়ার সময় চোখের ভেতরের কোনায় (নাকের পাশে) চেপে ধরলে নালিটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ওষুধ নাকে বা গলায় যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। সে ক্ষেত্রে রোজা রেখে আপনি অনায়াসে চোখে ড্রপ দিতে পারেন। প্রয়োজনে পদ্ধতিটি রপ্ত করার জন্য আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Related Posts
Comments
comments