তালের সাশের এই স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো আপনি জানেন কি?
তাল সুস্বাদু গ্রীষ্মকালীন ফল। গরমের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো সমাধানে সাহায্য করে তাল। এই উপমহাদেশের অনেক অঞ্চলেরই জনপ্রিয় গাছ তাল গাছ। কারণ এর সব অঙ্গ থেকেই কিছু না কিছু কাজের জিনিস তৈরি হয় যেমন- তাল পাতা দিয়ে হাতপাখা, চাটাই, মাদুর, আঁকবার পট, লেখার পুঁথি, কুন্ডলি, পুতুল ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
ঘর ছাওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। এর কান্ড দিয়ে বাড়ি, নৌকা, হাউজ বোট ইত্যাদি তৈরি করা হয়। তালের ফল ও বীজ উভয়েই বাঙালি খাদ্য। তালের ঘন নির্যাস দিয়ে পিঠা তৈরি হয়। তালের বীজ “তালশাঁস” নামে পরিচিত যা গ্রীষ্মকালের জনপ্রিয় খাবার। তাল গাছের কান্ড থেকেও রস সংগ্রহ করা হয় যা থেকে গুঁড়, পাটালি, মিছরি, তাড়ি(এক প্রকার চোলাই মদ)ইত্যাদি তৈরি করা হয়। তাল ফলটি পুষ্টিতে ভরপুর এবং এসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ঘামাচির মত স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
তাল ফলটি কেনার সময় নরম তাল কেনা উচিৎ। কারণ বেশি পাকা তাল হজম করতে সমস্যা হয় এবং পাকস্থলীর সমস্যা সৃষ্টি করে। পাকা তালে ভিটামিন এ, বি ও সি থাকে। জিংক, পটাসিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়ামের মত খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ তাল ফল। এছাড়াও এতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান ও থাকে।
আইস আপেল বা তালের স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো হচ্ছেঃ
* পেটের সমস্যা দূর করে
পেটের জ্বালাপোড়া দূর করার সবচেয়ে কার্যকরী প্রতিকার হচ্ছে তালের রস। গরমের সময় তৃষ্ণা মেটাতে ও হাইড্রেটেড থাকতে চমৎকার কাজ করে তাল ফল। এসিডিটির সমস্যা দূর করার জন্য তালের রস পান করুন নিয়মিত কয়েকদিন।
এছাড়াও হজমের সমস্যা ও পেটের অসুখ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী তাল ফলটি। লেক্সেটিভ বা জোলাপ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। তাল মিছরি ও সবুজ এলাচ ভালো করে গুঁড়ো করে নিন। তালের বীজের উপরের চামড়া ফেলে দিয়ে ছোট ছোট টুকরা করুন। একটি পাত্রে দুধ গরম করে নিন। ফুটন্ত দুধের মধ্যে মিছরি ও এলাচের মিশ্রণটি দিন। যখন মিশ্রণটি একেবারে দ্রবীভূত হয়ে যাবে তখন জ্বাল দেয়া বন্ধ করে দিন। এর মধ্যে কাঁটা তালের শাঁসগুলো দিয়ে দিন এবং ঠান্ডা করুন। এই পানীয়টি ২-৩ দিন ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন। এই পানীয়টি এসিডিটি ও আলসার ভালো করতে দারুন কার্যকরী।
* ত্বকের জন্য ভালো
গরমের ঘামাচি থেকে মুক্তি পেতে তাল অনেক ভালো কাজ করে। উপরের পাতলা স্তরটি সরিয়ে নিয়ে তালের শাঁসের ভিতরের রস আক্রান্ত স্থানে লাগালে শীতল অনুভূতি পাবেন এবং ঘামাচির চুলকানি দূর হবে। এছাড়াও চিকেন পক্সের উপসর্গ কমতে ও নিরাময়ে সাহায্য করে তালের শাঁস। অত্যধিক তাপে ত্বকের যে লালভাব হয় তা নিরাময়ে কাজ করে তালের রস। তালের ফেস প্যাক ত্বকের জন্য চমৎকার কাজ করে, এমনকি সেনসিটিভ ত্বকের মানুষদের জন্যও ভালো কাজ করে।
শিশুদের ত্বকের সমস্যা দূর করার জন্য এটি ভালো। পুলটিস বা প্রলেপ তৈরি করার জন্য একটি সুতির কাপড় গরম পানিতে দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে জীবাণুমুক্ত করার জন্য। তারপর কপড়টি থেকে পানি চিপে বের করে নিতে হবে এবং ঘরের তাপমাত্রায় ঠান্ডা করতে হবে। এখন তালের উপরের চামড়াটি ফেলে রস বাহির করে নিতে হবে এবং কাপড়টির মধ্যে এই রস লাগাতে হবে। তৈরি হয়ে গেলো পুলটিস। এবার এটি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন।
* ব্যথাযুক্ত মূত্রত্যাগ নিরাময়ে সাহায্য করে
গরমের সময় অনেকেই ব্যথাযুক্ত মূত্রত্যাগের সমস্যাটিতে ভুগে থাকেন। ৩টি কচি তালের রস ও ৩ কাপ ডাবের পানি মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি খুব বেশি মসৃণ করার দরকার নেই, তালের শাঁসের পাতলা টুকরো যেনো থাকে। এর সাথে তাল মিছরি মিশিয়ে নিতে পারেন মিষ্টি করার জন্য। এটি একটি চমৎকার সামার ড্রিংক যা আপনাকে হাইড্রেটেড রাখার পাশাপাশি ইনফেকশন মুক্ত হতেও সাহায্য করবে।
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধেও সাহায্য করবে এই পানীয়। এটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন। তালের শাঁস ফ্রিজে রেখে দিন এবং গরমের দিনে শিশুরা বাইরে খেলতে যাওয়ার আগে খেতে দিন।
এছাড়াও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে তাল। যারা ডায়েট করছেন তাদের জন্য একটি ভালো অপশন হচ্ছে তাল। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়েরই অপুষ্টি প্রতিরোধে সাহায্য করে তাল ফল। ত্বকের প্রদাহজনিত রোগ নিরাময়ে কাজ করে। বমি ও বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি ক্রিমিরোগ নিরাময়েও সাহায্য করে। লিভারের টনিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
Related Posts
Comments
comments