অবহেলা নয় শরীরের ৭টি লক্ষণকে
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু : লক্ষণ দেখে রোগ অনেকাংশে নির্ণয় করা সম্ভব। লক্ষণগুলো অবহেলা করে চিকিৎসা নিতে দেরি করলে রোগ জটিল আকার ধারণ করে। অথচ এ রোগগুলো শুরুতে নির্ণয় করতে পারলে চিকিৎসা সহজ হয়। আজকে এমন সাতটি লক্ষণ নিয়ে এ আলোচনা।
অতিরিক্ত ওজন হ্রাস
ওজন কমানোর জন্য অনেকেই কত কিছুই না করে। তরুণরা ডায়েটিংয়ের নামে ভুল খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলে। অতিরিক্ত ওজন হ্রাস কিন্তু রোগের লক্ষণ হতে পারে। ছয় মাসের মধ্যে ওজন যদি আগের ওজনের দশ শতাংশ কমে, যেমন কারোও ওজন ৬০ কেজি থেকে যদি কমে ৫৪ কেজি হয়, তবে তা আমলে আনতে হবে এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ওজন বিভিন্ন কারণে কমতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো হলো থাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত হরমোন ক্ষরণ, যাকে হাইপারথাইরয়ডিজম বলে। ক্যান্সার, যক্ষ্মা, লিভারের রোগবালাই, ডায়াবেটিস, শরীরে পুষ্টি উপাদান শোষিত না হওয়া যাকে ম্যালঅ্যাবর্জপশন সিন্ড্রোম বলে।
দীর্ঘমেয়াদি জ্বর
জ্বর কোনো রোগ নয়। এটা রোগের উপসর্গ মাত্র। শরীরের কোনো অংশে ইনফেকশন থাকলে জ্বর বাড়ে। তবে দীর্ঘমেয়াদি জ্বর বিভিন্ন কারণে হতে পারে। হালকা হালকা জ্বর সন্ধ্যার দিকে বাড়লে মনে করা হয় যক্ষ্মা, মাসাধিক কাল ধরে জ্বর হতে পারে এইডসে, প্রচণ্ড জ্বর হতে পারে ভাইরাসের সংক্রমণে, জ্বর প্রথমে অল্প মাত্রায়, পরে ধীরে ধীরে বাড়ে টাইফয়েডে, কাঁপুনিসহ প্রচণ্ড জ্বর হতে পারে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে। জ্বর যদি এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো না হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
শ্বাসকষ্ট
সাধারণত শ্বাসতন্ত্রের সমস্যার জন্য শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এ ছাড়া হৃদপিণ্ড ও অন্যান্য কারণেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শ্বাসকষ্ট বেশি হলে, রাতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলে, হাঁটাচলা না করতে পারলে, শ্বাসের সাথে বাঁশির মতো শব্দ হলে, হাসফাস লাগলে, শ্বাস টানার হার অনেক বেড়ে গেলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় বা ভারি কোনো কাজে শ্বাসকষ্ট হলে এবং বুকে চাপ অনুভব করলে মনে করা হয় এটা হৃদপিণ্ডের রোগ।
মল ত্যাগে পরিবর্তন
বার বার পাতলা পায়খানা হলে ( ২৪ ঘণ্টায় ৩ বার বা এর বেশি) তাকে ডায়রিয়া বলে। সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। মলের পরিবর্তন দেখে রোগ নির্ণয় করা যায়। মলের সাথে রক্ত গেলে, মল আলকাতরার মতো কালো দুর্গন্ধযুক্ত হলে, ডায়রিয়া এক সপ্তাহ ও কোষ্ঠকাঠিন্য তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কোলন ক্যান্সার, রেক্টাল ক্যান্সার, এনাল ফিশার, হেমোরয়েড, ইনফ্লামেটরি বাওল ডিজিজসহ আরো অনেক কারণেই এ লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। তবে এর সাথে অন্যান্য লক্ষণও যাচাই করে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন।
হঠাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথা
এমন মাথাব্যথা যার সাথে আগের মাথাব্যথার তুলনা করা যায় না। তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হতে। মাথাব্যথার সাথে জ্বর, আবোল-তাবোল কথা বলা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্বন্ধে ধারণা না থাকা এবং ৫৫ বছরের পর নতুন ধরনের মাথাব্যথাকে অবহেলা করা উচিত নয়। এ ধরনের মাথাব্যথা হতে পারে মাথায় রক্তক্ষরণ, মাথার খুলির রক্তনালিতে প্রদাহ, মস্তিষ্কে টিউমার হলে।
হঠাৎ করে অবশ হয়ে যাওয়া
স্বাভাবিক কাজকর্ম করছেন এমন সময় হঠাৎ করে শরীরের কোনো এক পাশ অবশ হয়ে গেল, কথা বলতে পারছেন না বা কথা জড়িয়ে যাচ্ছে বা চোখে ঠিকমতো দেখতে পারছেন না বা ঝাপসা দেখছেন, কিছু সময় পর (২৪ ঘণ্টার মধ্যে) সব সমস্যা ভালো হয়ে গেল। আগের মতোই স্বাভাবিক হয়ে গেলেন। মনে করছেন এটা কোনো সমস্যা নয়। আসলে তা নয়, এটা হলো মিনি স্ট্রোক। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে স্ট্রোক প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিন।
হজমে সমস্যা
অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়া সাথে ওজন কমে গেলে, ৪০ বছর বয়সের পর হজমের সমস্যা, ক্ষুধামান্দ্য, বমি বমি ভাব ও আগে থেকে আলসার থাকলে চিকিৎসকের কাছে যান।
লেখক: মেডিক্যাল অফিসার, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ।
Related Posts
Comments
comments