হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় !!!
গরম এই হাওয়াতে ঘরের বাইরে বের হলেই শরীরে ফোসকা পড়ার যোগাড়। কিন্তু কাজের তাগিদে বাইরে বের হতেই হয়। সেজন্য শারীরিক নানা সমস্যাতেও পড়তে হয়। স্বাভাবিক আবহাওয়ায় রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কিন্তু অন্য কোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে রক্তনালি প্রসারিত হয় এবং অতিরিক্ত তাপ ছেড়ে দেয়। প্রয়োজনে ঘামের মাধ্যমেও শরীরের তাপ কমানো হয়। কিন্তু প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্র পরিবেশে অনেকক্ষণ থাকলে বা পরিশ্রম করলে তাপ নিয়ন্ত্রণ আর সম্ভব হয় না। এতে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায়। অবশেষে হিটস্ট্রোক দেখা হতে পারে।
হিটস্ট্রোকের লক্ষণ
দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে দেহে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে হিটস্ট্রোকের আগে অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক হিট ক্র্যাম্প অথবা হিট এক্সাসশন হতে পারে। হিট ক্র্যাম্পে শরীরের মাংসপেশি ব্যথা করে, দুর্বল লাগে এবং প্রচণ্ড পিপাসা লাগে। এর পরের ধাপে হিট এক্সাসশনে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অসংলগ্ন আচরণ ইত্যাদি দেখা দেয়। এই দুই ক্ষেত্রেই শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে এবং শরীর প্রচণ্ড ঘামতে থাকে। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হিটস্ট্রোক হতে পারে।
এসময় শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়। ঘাম বন্ধ হয়ে যায়। ত্বক শুষ্ক ও লালাভ হয়ে যায়। নিঃশ্বাস দ্রুত হয়। নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ বা দ্রুত হতে পারে। রক্তচাপ কমে যায়। খিঁচুনি, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক ব্যবহার, হ্যালুসিনেশন, অসংলগ্নতা ইত্যাদি হতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়
গরমের দিনে কিছু সতর্কতা মেনে চললে হিটস্ট্রোকের বিপদ থেকে বেঁচে যাওয়া যায়। গরমের দিনে হালকা, ঢিলেঢালা সুতি কাপড় পরিধান করতে পারেন। কাপড় সাদা বা হালকা রঙের হলে গরম কম লাগে। যথাসম্ভব ঘরের ভিতর বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন। বাইরে যেতে হলে চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি বা ছাতা ব্যবহার করুন। বাইরে যারা কাজকর্মে নিয়োজিত থাকেন, তারা ছাতা বা কাপড়জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে পারেন। এসময় সুস্থ থাকতে প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল খাবার পান করতে হবে। ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ বের হয়ে যায় তাই পানির সঙ্গে খাওয়ার স্যালাইন, ফলের রস, লাচ্ছি ইত্যাদি পান করতে পারেন।
আক্রান্ত হলে করণীয়
দ্রুত শীতল কোনো স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। ভেজা কাপড়ে বার বার শরীর মুছে ফেলুন। সম্ভব হলে গোসল করুন। প্রচুর পানি ও খাওয়ার স্যালাইন পান করুন। চা বা কফি এসময় এড়িয়ে যাওয়ায় ভালো। যদি হিটস্ট্রোক হয়েই যায়, রোগীকে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে, ঘরে চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে বাতাস করতে হবে। সম্ভব হলে কাঁধে, বগলে ও কুচকিতে বরফ দিন। রোগীর জ্ঞান থাকলে তাকে খাওয়ার স্যালাইন দিতে হবে। সবসময় খেয়াল রাখবেন, হিটস্ট্রোকে অজ্ঞান রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস ও নাড়ি চলছে কিনা। প্রয়োজন হলে কৃত্রিমভাবে নিঃশ্বাস ও নাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হতে পারে। হিটস্ট্রোকে জীবন বিপদাপন্ন হতে পারে। তাই অসহ্য গরমের এই সময়ে সবাই সতর্ক থাকুন।
Related Posts
Comments
comments