ঠোঁটের সৌন্দর্যহানির কারণ ও প্রতিকার !!!
আমাদের শরীরের সবচেয়ে সংবেদনশীল ত্বকের অন্যতম হচ্ছে ঠোঁটের ত্বক। ঠোঁটের ত্বকের গঠন-প্রকৃতি শরীরের অন্য স্থানের ত্বকের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। ঠোঁটের ত্বকে শরীরের অন্য স্থানের ত্বকের মতো চুল, রঞ্জক পদার্থ মেলানিন ও তৈলাক্ত পদার্থ সিবাম নিঃসরণকারী সিবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থাকে না। এতে ঠোঁট সহজেই রোদে পুড়ে শুকিয়ে যায়। ঠোঁটে বিভিন্ন কারণে ছোট-বড় অনেক সমস্যা সহজেই দেখা দেয়।
ঠোঁটের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা, তার কারণ ও প্রতিকার নিয়েই আজকের লেখা।
* শুষ্ক আবহাওয়া
বাতাসের আর্দ্রতা কমে গেলে, অর্থাৎ শুষ্কতা বেড়ে গেলে আমাদের ত্বক দিয়ে বেরিয়ে আসা পানি দ্রুত শুকিয়ে যায়। ফলে ত্বকের ওপরের স্তর অত্যধিক শুষ্কতার কারণে চটচট করে ফাটতে থাকে। আর ঠোঁটে এ সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
* অধিক মাত্রায় রোদ
যাঁরা অধিক মাত্রায় রোদে ঘোরাফেরা করেন বা অধিক সময়ের জন্য রোদে কাজ করেন, তাঁদের ঠোঁট স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি কালো ও শুকনো হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া রোদে পুড়ে এক ধরনের প্রদাহেরও সৃষ্টি হয়।
* প্রসাধনসামগ্রী
অনেক সময় ঠোঁটে ব্যবহারের বিভিন্ন প্রসাধনসামগ্রী, যেমন-লিপস্টিক, লিপলাইনার ইত্যাদি ত্বকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ার কারণে ঠোঁটে নানা ধরনের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ থেকে ঠোঁটের ত্বকে তীব্র প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে।
* জীবাণু সংক্রমণ
হারপিস সিমপ্লেক্স নামে একটি ভাইরাস আছে। এটি সাধারণত ঠোঁটেই বেশি ইনফেকশন করে। ক্যানডিডা নামে ছত্রাকজাতীয় একটি জীবাণুও অনেকের ঠোঁটে সমস্যা করে থাকে। বিকৃত যৌনাচারের ফলেও ঠোঁটে বেশ কিছু সংক্রামক যৌনরোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
* ধূমপান
ধূমপান করার সময় প্রথমেই ঠোঁটের ব্যবহার হয়ে থাকে। এতে ধূমপানের কারণে ঠোঁট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঠোঁট ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে যায়। এ ছাড়া অনেকে পান খেয়ে থাকেন, যার সঙ্গে থাকে চুন (ক্যালসিয়াম অক্সাইড), খয়ের (রং), জর্দা (তামাকপাতা)। এগুলো ঠোঁটের জন্য নানা রকম ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেয়।
* অতিরিক্ত গরম পানীয় গ্রহণ
নিয়মিত অতিরিক্ত গরম চা-কফি গ্রহণের ফলেও ঠোঁটের ত্বকের ক্ষতি হতে পারে এবং ঠোঁটের কোমল ত্বক ধীরে ধীরে পুড়ে গিয়ে করতে পারে সৌন্দর্যহানি।
* কিছু মুদ্রাদোষ
কিছু কিছু মুদ্রাদোষ আছে, যেগুলো ক্ষতির কারণ হয়। যেমনঃ দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ানো, নখ দিয়ে ঠোঁটের চামড়া টানা, জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজানো। এ ছাড়া আঙুল চোষার ফলে ঠোঁটের স্বাভাবিক সৌন্দর্য তো নষ্ট হয়ই, এ থেকে অন্য আরো অনেক স্বাস্থ্য সমস্যাও দেখা দেয়।
* আঘাতজনিত
অন্যের দাঁতের কামড়ে অথবা নিজের নকল দাঁত বা আঁকাবাঁকা ধারালো দাঁতের দীর্ঘদিন ধরে একটানা আঘাতেও ঠোঁটের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
* কিছু চর্মরোগ
ঠোঁটের ত্বকে শ্বেতী রোগ খুব সাধারণ। এ রকম আরো কিছু চর্মরোগ আছে, যা ঠোঁটকে আক্রান্ত করতে পারে।
* অন্যান্য শারীরিক রোগ
শরীরের ভেতরের বিভিন্ন রোগের প্রতিফলন অনেক সময় ঠোঁটে আত্মপ্রকাশ করে থাকে নানাভাবে।
এসব নির্দিষ্ট সমস্যা ছাড়াও অনেকেই, বিশেষ করে মেয়েরা বিব্রতকর সমস্যায় থাকেন কালো ঠোঁট নিয়ে এবং ডাক্তারের কাছে এ সমস্যা নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসেন। হঠাৎ করে বিশেষ কোনো রোগে বা কোনো কারণে এ রকম হয়ে থাকলে তা হয়তো চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। তবে ঠোঁট কালো হলেই যে রোগ তা কিন্তু নয়, অনেকের জন্য ত্বকের এ ধরনই স্বাভাবিক।
পারিবারিক ও বংশানুক্রমিক টান, ব্যক্তিগত অভ্যাস ও জীবনধারাও অনেক সময় ঠোঁটের সৌন্দর্যহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
Related Posts
Comments
comments