প্রাক্তনকে সহজে ভুলে যাওয়ার কার্যকরী উপায়গুলো
চিকিৎসকদের কাছে প্রতিদিন অনেকে আসেন ডিপ্রেশন নিয়ে আসেন। তাদের অধিকাংশই “বিষাক্ত” প্রেমের সম্পর্কের কারণে ডিপ্রেশন রোগে ভুগে থাকেন।
এসব রোগী নিজেও বোঝেন তাদের একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে সেই বিষাক্ত সম্পর্ক শেষ করা। কারণ এ ধরনের সম্পর্ক মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটি একজন মানুষকে মানসিকভাবে পুরোপুরি অস্থির করে তুলতে পারে। এমনকি ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডারের মতো খারাপ রোগে আচ্ছন্ন করে ফেলতে পারে। অনেকে আত্মহত্যার চিন্তা বা চেষ্টা পর্যন্ত করে ফেলেন দীর্ঘদিন এরকম হতাশার অসুখে ভোগার ফলে। মনে রাখতে হবে, মানুষ কিন্তু মরতে চায় না, শুধু তার অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চায়। মাথা ব্যাথা হলে নিশ্চয়ই মাথা কেটে ফেলা সমাধান নয়। শুধু ব্যথার চিকিৎসা করেই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব!
একটা মানুষকে ভুলে যাওয়া খুব সহজ না। তবে মানুষ চাইলে পারে না, এমন কোনো কাজ নেই। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আপনি পারবেন। আর নিজের সমস্যা সমাধানে নিজেকেই আগ্রহী হতে হবে।
এই বিষয়গুলোর উপর ভিডিও বা স্বাস্থ্য বিষয়ক ভিডিও দেখতে চাইলে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি ঠিকানা: – YouTube.com/HealthDoctorBD
এক্ষেত্রে কিছু কার্যকরী উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো:
• বৈজ্ঞানিকভাবে প্রেম একটা নেশার মতো। একটা নেশা ছাড়তে হলে আরেকটা নেশাই ধরা লাগে। এখানে কিন্তু মাদকের নেশার কথা বলা হচ্ছে না। এছাড়াও নেশা আছে। সেগুলো হতে পারে সিনেমা, বই কিংবা ঘুরে বেড়ানোর! অবশ্যই সেই মানুষটির সঙ্গে আপনার নিয়মিত কথা বলা বা ঘুরে বেড়ানোর একটা অভ্যাস ছিল। মানুষ অভ্যাসের দাস। তাই নতুন আরেকটা অভ্যাস তৈরি করুন।
• স্মৃতিময় জিনিসগুলো ফেলে দিতে হবে। নষ্ট করে ফেলতে হবে। পুড়িয়ে ফেলতে হবে। যেমন, সেই মানুষটির দেওয়া গিফট। এতে করে সেগুলো সামনে আর আসবে না, আগের কথা আর মনে পড়বে না।
• যে জায়গায় বসে বসে ফোনে কথা বলতেন, সেই জায়গাটা এলোমেলো করে দিন। খাটের জায়গায় সোফা আর সোফার জায়গায় খাট! ঘরের পর্দা, লাইট এসব পাল্টে ফেলুন। অন্যরকম আবহ আনুন চারপাশে।
• যেসব জায়গায় একসঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন, পারতপক্ষে কিছুদিন সেসব জায়গা এড়িয়ে চলুন। কিছুদিন পর দেখবেন আপনার দুঃখের অনুভূতি কমে আছে। নিশ্চই জানেন, “সময় সব ক্ষত সারিয়ে তোলে”।
• সবচেয়ে ভালো হচ্ছে, জোর করে হলেও মনে মনে অন্য কারও কথা ভাবুন। অন্য কারও প্রেমে পড়ার চেষ্টা করুন। অন্তত অন্য কারও সঙ্গে সময় কাটান, আড্ডা দিন, ঘুরে বেড়ান। তাহলে আগের স্মৃতি ফিকে হয়ে যাবে! প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন আছে। তবে একজনকে ভুলতে আরেকজনকে ব্যবহার করা উচিত না। মানসিকভাবে শক্ত না হয়ে নতুন সম্পর্কে জড়ানো ঠিক নয়।
• বিয়ে করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিন।
• ১০-১৫ দিনের জন্য গ্রামের বাড়ি বা দূরে কোথাও বেড়িয়ে আসুন। ভুলতে সুবিধে হবে।
• সবার সাথে দুঃখের কথা বলে বেড়ান। দুঃখ শেয়ার করলে কমে! আর সুখ শেয়ার করলে বাড়ে!
• নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।
• কোনো কমেডি টিভি সিরিজ দেখা শুরু করতে পারেন। F. R. I. E. N. D. S. বা The Office ইত্যাদি।
• জিমে ভর্তি হতে পারেন। এটা খুবই উপকার এনে দেবে।
• নিজস্ব ধর্মীয় উপাসনা করুন অথবা যোগব্যায়াম শুরু করুন।
• শোককে শক্তিতে পরিণত করতে পারেন। কৌশলে তাকেও কিছু কষ্ট দিয়ে প্রতিশোধ নিতে পারেন! দয়া করে এ বিষয়টিকে নিছক মজা হিসেবে নেবেন। সিরিয়াসভাবে না নেওয়াই ভাল। আপনি যত পরিপক্ক হবেন, ততই বুঝতে শিখবেন যে ক্ষমার থেকে মহৎ কিছু হতে পারে না। মনের ভেতর ঘৃণা পর্যন্ত রাখা যাবে না। কারণ ঘৃণার ভার অনেক বেশি। সেটা আপনার মনকে এতটাই ভারাক্রান্ত করে ফেলবে যে আপনার মনের সুখ আর রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে যাবে।
আসল কথা হচ্ছে, আপনার ইচ্ছা থাকতে হবে যে আপনি তাকে ভুলবেন। “সে খারাপ, সে আপনার জন্য ক্ষতিকর।” আপনার জন্য আরো ভালো কিছু অপেক্ষা করছে, এটা মাথায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে বন্ধু-বান্ধব, বাবা-মায়ের সঙ্গে আপনার সমস্যা খুলে বলুন। এবং কোনোভাবেই কাজ না হলে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট বা সাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হতে পারেন। এক্ষেত্রে তিনি হয়তো কিছু ওষুধ দিয়ে আপনার দুঃখ কমানোর ব্যবস্থা করবেন। তবে ওষুধের থেকে এসব ক্ষেত্রে নিজের চেষ্টা ও ইচ্ছাই সব থেকে ভাল ফলাফল এনে দেবে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন