চুল ও মাথার ত্বকের অন্যতম প্রচলিত ও সাধারণ একটি সমস্যা হলো খুশকি। যার প্রাদুর্ভাব শীতকাল আসার সাথে সাথে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। খুশকি তৈরি হয় মাথার ত্বকের মরা চামড়া থেকে। ত্বকের এই সমস্যাকে বলা হয়ে থাকে Seborrheic Dermatitis. এমনটা হয়ে থাকতে পারে একজিমা, সোরিয়াসিস অথবা ইষ্ট-এর আক্রমনে ফাংগাস তৈরি হওয়া থেকেও। এই ফাংগাসকে বলা হয়ে থাকে Malassezia.খুশকির সমস্যা দূর করার জন্যে বাজারে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরণের খুশকি-নাশক শ্যাম্পু। এই সকল শ্যাম্পু ব্যবহারে খুশকির সমস্যা থেকে সাময়িকভাবে মুক্তি পাওয়া গেলেও, চুল পড়ার হার বেড়ে যায় অনেকখানি। আজকের ফিচার থেকে জেনে নিন কীভাবে প্রাকৃতিক উপাদান সমূহ ব্যবহারে ঘরে বসেই খুশকির সমস্যাকে দূরে রাখা সম্ভব।

টি ট্রি অয়েল

এই বিষয়গুলোর উপর ভিডিও বা স্বাস্থ্য বিষয়ক ভিডিও দেখতে চাইলে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি ঠিকানা: – YouTube.com/HealthDoctorBD

এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে, নিত্যদিনের ব্যবহৃত শ্যাম্পুর সাথে ৫ শতাংশ পরিমাণ টি ট্রি অয়েল যোগ করলে খুশকির সমস্যার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় উন্নতি দেখা দেয়। টি ট্রি অয়েলের অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ফাংগাল উপাদান সমূহ, খুশকি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়ায় বাঁধা প্রদান করে থাকে।

বেকিং সোডা

প্রায় সকলের রান্নাঘরে থাকা এই উপাদানটি মাথার ত্বকের বিরক্তিকর সমস্যাটি দূর করতে খুব উপকারী। কিছু উপাদান রয়েছে যা ব্যবহারে খুশকির সমস্যার ক্ষেত্রে দ্বিগুণ উপকার পাওয়া সম্ভব হয়। তার মাঝে রয়েছে বেকিং সোডা। মাথার ত্বক ও চুল পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে এরপর কিছু পরিমাণ বেকিং সোডা ভেজা মাথার ত্বকে ভালোভাবে ঘষতে হবে। শ্যাম্পু ব্যতীত ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে পানি দিয়ে। এই প্রক্রিয়ায় বেকিং সোডা ব্যবহারে মাথার ত্বকের ফাংগাল সমস্যা অনেকটাই ভালো হয়ে যায়। বেকিং সোডা ব্যবহারের প্রথম দিকে মাথার ত্বক কিছুটা শুষ্ক হয়ে গেলেও, কিছুদিন পরেই ত্বক প্রাকৃতিক তেল নিঃসরণ করা শুরু করে দেয় বিধায় মাথার ত্বক আর শুষ্ক থাকবে না।

এই বিষয়গুলোর উপর ভিডিও বা স্বাস্থ্য বিষয়ক ভিডিও দেখতে চাইলে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি ঠিকানা: – YouTube.com/HealthDoctorBD

অ্যাপল সাইডার ভিনেগার

ডা. মেহমেত জানান, খুশকির সমস্যা নিরসনে এসিভি হলো সবচেয়ে কার্যকরি একটি উপাদান। কারণ, এসিভির অ্যাসিডিটি মাথার ত্বক ও চুলের গোড়ার pH এর মাত্রায় ভিন্নতা নিয়ে আসে। যার ফলে মাথার ত্বকে ইষ্ট তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। দুই টেবিল চামচ এসিভির সাথে এক গ্লাস পরিমাণ পানি মিশিয়ে স্প্রে বোতলে নিতে হবে। এরপর পুরো মাথার চুলের গোড়ায় ভালোভাবে এই মিশ্রণ স্প্রে করে একটি তোয়ালের সাহায্যে মাথা জড়িয়ে রেখে দিতে হবে ১৫-২৫ মিনিট এর জন্য। এরপর সাধারণভাবে মাথার ত্বক ও চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। টানা এক সপ্তাহের জন্য চুলে এইভাবে এসিভি ব্যবহার করতে হবে।

মাউথওয়াশ

মাথার ত্বকে অতিরিক্ত খুশকির সমস্যা দেখা দিলে প্রতিদিনের ব্যবহৃত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নেওয়ার পর মাউথওয়াশ দিয়ে চুল পুনরায় ধুয়ে নিতে হবে। এরপর চুলে ভালো মানের কোন কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। মাউথওয়াশ একটি অ্যান্টি-ফাংগাল উপাদান। যা খুশকি তৈরি হওয়াতে বাধা প্রদান করে থাকে।

লেবু

ঘরে যদি কয়েকটি লেবু থাকে তবে খুশকির সমস্যার জন্য দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই একেবারেই। মাথার ত্বকে দুই টেবিল চামচ পরিমাণ লেবুর রস ভালোভাবে ম্যাসাজ করে এরপর পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর, এক চা চামচ লেবুর রস এক কাপ পরিমাণ পানিতে মিশিয়ে এরপর সেই মিশ্রণ দিয়ে চুল ভালোভাবে পুনরায় ধুয়ে নিতে হবে। খুশকির সমস্যা একেবারে চলে না যাওয়া পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে চুল প্রতিদিন ধুয়ে যেতে হবে।  লেবুর অ্যাসিডিটি মাথার ত্বকের pH এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে থাকে।

নারিকেল তেল

সবচেয়ে প্রাচীন ও উপকারী তেল হচ্ছে নারিকেল তেল। খুশকির সমস্যার ক্ষেত্রে যার উপকারিতা প্রমাণিত। গোসল করার আগে ২-৩ টেবিল চামচ নারিকেল তেল চুলের গোড়ায় ভালোভাবে ম্যাসাজ করে এক ঘণ্টার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এরপর সাধারণভাবে চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

লবণ

লবণ হলো মাথার ত্বকের জন্য দারুণ একটি স্ক্রাবার উপাদান। প্রথমে কিছু পরিমাণ লবণ মাথার শুষ্ক ত্বকে নিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। কিছুক্ষণ পর ভালো মানের কোন শ্যাম্পু দিয়ে মাথার ত্বক পরিষ্কারভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

অ্যালোভেরা

অন্যান্য সকল উপাদান ব্যবহারে খুশকির সমস্যা দূর হলেও, অ্যালোভেরা ব্যবহারে খুশকির সমস্যা দূর হবার সাথে সাথে মাথার ত্বকের চুলকানির প্রাদুর্ভাবও দূর হয়ে যায়। চুলে শ্যাম্পু ব্যবহারের পূর্বে প্রাকৃতিক অ্যালভেরার জেল চুলের গোড়ায় ও মাথার ত্বকে ভালভাবে ম্যাসাজ করে নিতে হবে।

অলিভ অয়েল

অলিভ অয়েলের অগণ্য গুণাগুণের মাঝে মাথার ত্বকের খুশির সমস্যা দূর করা অন্যতম। পরিমাণ মতো অলিভ অয়েল শুধুমাত্র মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে পুরো মাথার চুল জড়িয়ে রেখে দিতে হবে সারা রাতের জন্য। পরদিন সকালে ভালোভাবে চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

সূত্রReaders Digest